কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ শাসনে ভারতীয় মুসলমান
সবুজ সফর : ভারতের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কংগ্রেস প্রসঙ্গ সর্বাগ্রে আসবেই।মুসলমানরা কেমন আছে, বহু পুরনো এ প্রশ্নের সহজ উত্তর, একমাত্র উত্তর, ‘ভালো নেই’। সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও এ কথা স্বীকার করেছেন। কিছুদিন আগে অ্যাসোসিয়েশন -অ্যাপ, গাইডেন্স গিল্ড ও প্রতীচী ইনস্টিটিউটের তৈরি ‘ মুসলমানদের জীবনের বাস্তবতা : একটি প্রতিবেদন’ শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে অমর্ত্য সেন বলেছেন, মুসলমানদের যে কতটা বঞ্চনা সহ্য করতে হয়, তা কেবল বহুমাত্রিক পাঠের মাধ্যমেই বোঝা যায়। সাচার কমিটির রিপোর্ট পরোক্ষ সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আলোচ্য রিপোর্টটির ভিত্তি প্রত্যক্ষভাবে পাওয়া তথ্য।” এ রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের সিংহভাগই মুসলমান। জীবনযাপনের নিরিখে তারা অসামাঞ্জস্যভাবে দরিদ্র ও বঞ্চিততর।মুসলমানদের এ অবস্থার পরিবর্তন সহসা হবে এমন আলামত দৃশ্যগ্রাহ্য নয়। সাচার কমিটির সুপারিশ আজও বাস্তবায়িত হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা ক্ষমতায় বলয় থেকে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে তেমন গরজ দেখা যায় না। যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব সদয় হতো, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় দিতো, তাহলে এতদিনে মুসলমানদের অবস্থার কিছু না কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হতো।এসোসিয়েশন স্ন্যাপ, গাইডেন্স গিল্ড এবং প্রতীচী ইন্সটিটিউট অনেক খেটেখুটে দীর্ঘ সময় নিয়ে যে রিপোর্ট তৈরি করেছে তা ভবিষ্যতে কোনো কাজে আসবে কিনা, মুসলমানদের উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠায় কোন ভূমিকা রাখবে কিনা ভবিষ্যতই বলতে পারে। তাদের এ উদ্যোগ ও কাজ অভিনন্দনযোগ্য। আর কিছু হোক না হোক, এই রিপোর্টের আয়নায় ভারতীয় মুসলমানেরা নিজেদের দেখতে পাবে এবং তাতে তাদের মধ্যে হয়তো সচেতনতা ও সক্রিয়তা বাড়তে পারে।মুসলমানরা যদি উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠা ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে চায় তাহলে সম্প্রদায়গতভাবে তাদের আরো সচেতন হতে হবে। সংঘবদ্ধ হতে হবে। জেগে উঠতে হবে। তাদের শিক্ষার ব্যাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। যে কোনো মূল্যে শিক্ষিত হয়ে উঠতে হবে। কর্মসংস্থানের উপর জোর দিতে হবে। শিক্ষণ-প্রশিক্ষণে উপযুক্ত হয়ে সরকারী-বেসরকারী চাকরি তালাশ করতে হবে। চাকরির জন্য সোচ্চার হতে হবে। এই সঙ্গে বিভিন্ন পেশা গ্রহণসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগ দিতে হবে। আর রাজনীতি যেহেতু সব কিছুর নিয়ন্তা সুতরাং তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণও বাড়াতে হবে।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ভারতের মুসলমানরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের নিগড় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। দারিদ্র্য তাদের ললাট লিখন এবং বঞ্চনা নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে। ভারতীয় সংবিধানে জাতি-ধর্ম ও বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমানাধিকার স্বীকার করা হলেও বাস্তবে মুসলমানরা এই অধিকার থেকে শোচনীয়ভাবে বঞ্চিত। এমনকি দলিত সম্প্রদায়ের চেয়েও তাদের অবস্থা খারাপ।ভারতের মুসলমান সমাজ স্বাধীনতার পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেসকে সমথর্র্ন করে এসেছে। দেশভাগের কারণে উদ্ভূত দাঙ্গাহাঙ্গামার পরিস্থিতিতে এক জন মুসলমান মনে করতেন, তাঁর ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনের নিরাপত্তাই প্রধান। তাঁরা মনে করতেন, কংগ্রেসকে ভোট দিলে নিরাপত্তা থাকবে। কিন্তু মুসলমান সমাজের প্রাপ্য আর্থ-সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কংগ্রেস-সহ কোনও রাজনৈতিক দলই পালন করেনি।