বাংলায় আর কবে ?
কালা যাদু খতম করা হবে। তন্ত্রমন্ত্রের বুজরুকিও চলবে না। তাবিজ, মাদুলি বা কবজের নামে প্রতারণা রুখতে এবার সক্রিয় গুজরাট সরকার। এসবের বিরুদ্ধে কড়া আইন বলবৎ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিধানসভায় তা পাশ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের এ হেন কর্মকান্ডের প্রশংসা করেছেন বিরোধীরাও। তাদের বক্তব্য, দেরিতে হলেও সরকারের বোধোদয়ে তারা খুশি। যাইহোক, জ্যোতিষ, তন্ত্রমন্ত্রের নামে জুয়া-জোচ্চুরি রুখতে সরকারের এই পদক্ষেপ অভিন¨নের অপেক্ষা রাখে না। সেক্ষেত্রে এ বাংলায় এসবের বিরুদ্ধে কড়া আইন কবে বলবৎ হবে- তা নিয়ে তো প্রশ্ন তো থেকেই যায়। বলাই বাহুল্য, ১৯৯৯ সালে আমাদের প্রতিবেশি রাজ্য বিহার কালা যাদু বা জ্যোতিষের নামে প্রতারণা রুখতে বিধিনিষেধ জারি করে। পরবর্তীতে ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, কর্নাটকেও কালা যাদু রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে এ ধরনের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে খুন হয়ে যান বিশিষ্ট সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকর। তিনি এই আন্দোলনকে সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বলি হতে হয় দাভোলকরকে। সত্যি কথা বলতে কী, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও কালা যাদু বা তন্ত্রমন্ত্রের নামে এক বিশাল প্রতারণার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বাংলা তার মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত জ্যোতিষ বা তন্ত্রমন্ত্রের নামে অসাধ্য সাদন করার বিজ্ঞাপন চলছে। সংবাদমাধ্যম, বিনোদন মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে এসবের ঢালাও প্রচার চলছে। তন্ত্রমন্ত্র বা মাদুলি, কবজ বা রত্নধারনের মাধ্যমে জীবনের দুঃখকষ্ট, যন্ত্রণার মুক্তি মিলবে। এখানেই শেষ নয়, তন্ত্রমন্ত্র, হোমযজ্ঞের মাধ্যমে দুরারোগ্য ব্যধি নিরাময়ের চ্যালেঞ্জ করছেন স্বঘোষিত জ্যোতিষ বা তান্ত্রিক নামধারী প্রতারকরা। আর তাতেই প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষজন। জীবনের মুশকিল আসান করার চটজলদি উপায় খুঁজতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করছেন। নিশ্চিতভাবে বলাই যায়, তন্ত্রমন্ত্রে কাজের কাজ হওয়া সম্ভব নয়। অথচ কিছু না বুঝে, না ভেবে এসব প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন সাধারণ মানুষজন। তবে সমাজের এ ধরনের কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে সার্বিক সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি যুক্তিবাদী সংস্থা বা বিজ্ঞান মঞ্চ রয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যকারিতা চোখেই পড়ে না বললেই চলে। প্রতিষ্টিত নাগরিক সমাজ এসব বন্ধে উৎসাহী-এমন খবরও জানা নেই। পাশাপাশি জ্যোতিষ, তন্ত্রমন্ত্র বা তাবিজ, মাদুলি, কবজের বেআইনি কাজ কারবার বন্ধে তৎপর নয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা সরকারও। ফলে প্রতিদিনই লোক ঠকানোর ঢালাও বাণিজ্য চালাচ্ছেন প্রতারকরা। তাদের নামের পেছনে বড় বড় জ্যোতিষ ডিগ্রি দেখানো হয়। বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি বা শংসাপত্রও ওই সব জ্যোতিষ বা তান্ত্রিক নামধারী প্রতারকদের তরফে। কেউ কেউ নিজেদের ডক্টরেট বলেও দাবি করছেন। দেশে জ্যোতিষ শাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়ার কোনও বিধিনিয়ম নেই। কিন্তু তা হলে কী হবে? প্রকাশ্যে ডিগ্রি নিয়ে জালজোচ্চুরি সত্ত্বেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গিয়েছেন। আসলে এ ব্যাপারে ব্যাপক জন সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। সেক্ষেত্রে সরকার তো বটেই, বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাকেও সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। বিহারে হয়েছে। ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, ছত্তিশগড়েও এসব রোধে বিল আনা হয়েছে। এবারও গুজরাটেও কড়া আইন আনা হচ্ছে। এ পথে বাংলা কবে হাঁটবে? প্রশ্ন তো থেকেই যায়।