এমএএমসি কলোনিতে জবরদখল উচ্ছেদে প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন সর্বস্তরে
সংবাদসফর, দুর্গাপুর: জবরদখলে নজির গড়েছে এমএএমসি। সরকারি জমিজায়গা থেকে আবাসন দখল হয়ে গিয়েছে প্রকাশ্যে। এখনও বন্ধ হয়নি বেআইনি নির্মাণ। সেক্ষেত্রে এই এলাকাকে জবরদখলমুক্ত করতে কী পদক্ষেপ নেয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। বর্তমানে দুর্গাপুর শহর শিল্পাঞ্চলকে পচ্ছিন্ন ও বেআইনি দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ণ পর্ষদ অর্থাৎ এডিডিএ। সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গজিয়ে ওঠা বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙার কাজ শুরু হয়েছিল জোরকদমে। সিটিসেন্টার সহ শহরের ব্যস্ত এলাকার ফুটপাত, সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে বেপরোয়া ভাঙচুর চালানো হয় প্রশাসনের তরফে। নির্বাচন পরবর্তীতে জবরদখল উচ্ছেদে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর করতে জরুরিকালীন ভিত্তিতে এডিডিএ-র তরফে সাফাই অভিযানে নামেন বর্তমান চেয়ারম্যান কবি দত্ত সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা। তবে আসন্ন উৎসবের মাসের কথা ভেবে ধীরে চলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুজোর পরেই ফের এই অভিযান চলবে বলে খবর মিলেছে। তবে এসবের পরিপ্রেক্ষিতে এমএএমসি-র বিস্তীর্ণ এলাকায় সরকারি জমি জায়গা উদ্ধারে কতটা তৎপর হবে- তা নিয়ে জল্পনা চরমে উঠেছে। বেশ কয়েকে বছর ধরে এমএএমসি উপনগরীতে বেআইনি নির্মাণের রমরমা চলছে। ডিভিসি মোড় সংলগ্ন সুভাষ পল্লী সহ বিভিন্ন এলাকায় শাসক নেতৃত্বকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতবদলের মাধ্যমে এ ধরনের বেআইনি কার্যকলার চলছে। তা এখনও বন্ধ করা যায়নি। বলাই বাহুল্য, হাজারও চেষ্টা সত্ত্বেও অবৈধ দখলদারি আটকানো যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের নামধারী বেশ কিছু নেতানেত্রী জমিজায়গা দখল থেকে শুরু আবাসন দখলে নেমে পড়েছেন। এমএএমসি উপনগরীতে জবরদখল প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি কার্যত অসহায়তা গোপন করেননি পূর্বতন এডিডিএ চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেক্ষেত্রে দলের মধ্যে এ ধরনের বেনো জল আটকাতে দলীয় নেতৃত্বই এতদিন কী করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষজন। এমএএমসি টাউনশীপের বিস্তীর্ণ এলাকা জবরদখলকারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। বছর খানেক আগে এই উপনগরীতে ‘ হঠাৎ কলোনি’-র নামে শিল্পাঞ্চলে রীতিমতো শোরগোল পড়েযায়। মুখরক্ষায় সে সময় প্রশাসন সক্রিয় হয় ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীতে এসব নিয়ে নজর সরিয়ে নেন প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা। তারই প্রমাণ মিলেছে এমএএমসি-তে। এখনও প্রকাশ্যে সেই কলোনি এলাকায় নির্মাণকাজ চলছে বেপরোয়াভাবে। তবে সেক্ষেত্রে শাসকদলের একাংশের মদতের অভিযোগ উঠেছে। প্লট পিছু লক্ষ লক্ষ টাকা লেনের অভিযোগ উঠছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি জমি উদ্ধারে পথে নামেন এডিডিএ-র কর্তারা। এমএএমসি-র বেশ কিছু জায়গায় বেআইনি নির্মাণ ভেঙেও ফেলা হয়। কিন্তু তৃণমূল নেতানেত্রীদের বেআইনি নির্মাণে হাত লাগাবার সাহস দেখাননি তারা বলে অভিযোগ। কিন্তু এসবের মধ্যেই হঠাৎ কলোনির উদয় হয়। তবে শুধু এমএএমসি উপনগরীই নয়, পার্শ্ববর্তী বিওজিএল কলোনীতেও বেআইনিভাবে নির্মাণ কাজ চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। সব দেখেশুনেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা শাসকদলের কোনও হেলদোল নেই। এমনকি সরকারি আবাসন সংস্কারের নামেও বেআইনি নির্মাণ চলছে বেপরোয়াভাবে। বলাই বাহুল্য, এমএএমসি কারখানা বন্ধ হওয়ার পর থেকে জবরদখলকারীদের রমরমা বেড়েছে। জমিজায়গা তো বটেই, এই উপনগরীর আবাসনও বেদখল হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় শাসক নেতৃত্বের মদতের অভিযোগ রয়েছে। এমএএমসি কোয়াটার হাত বদলে লক্ষ লক্ষ টাকা কামাচ্ছেন তারা। এমনকি নিশ্চিন্তে নিঃশুল্ক জলবিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছেন তারা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাব্যাক্তিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। তবে এ ধরনের কার্যকলাপে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশে যোগসাজশের কথাও প্রকারান্তরে স্বাকীর করে নেন তৎকালীন এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশও করেন তিনি। ব্যস, এই পর্যন্ত। তার পরে আর কোনও পদক্ষেপ নিতে তাকে দেখা যায়নি। বলাই বাহুল্য, বর্তমানে এডিডিএ-র অধীনে রয়েছে এমএএমসি কলোনি। কারখানা র শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য প্রায় চার হাজার আবাসন নির্মাণ করা হয় তৎকালীন কর্তৃপক্ষের তরফে। কিন্তু কারখানা বন্ধ হতেই পুরো এলাকা প্রায় ভগ্নস্তুপে পরিণত হয়। বর্তমানে দু হাজারের মতো কোয়াটারে আবাসিক রয়েছেন। কিন্তু বাকি কোয়াটারগুলির অধিকাংশই বেহাত হয়ে গিয়েছে। রীতিমতো জবরদখল করে নিশ্চিন্তে বসবাস করছেন বেশ কিছু মানুষজন। তবে সেক্ষেত্রে স্থানীয় দলের অনুমতি সাপেক্ষে নিশ্চয়। বেশ কিছু আবাসনে অসামাজিক কার্যকলাপও হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ মেলে। অথচ সব জেনেশুনেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষোভ বাড়ছে এই উপনগরীতে। একইসঙ্গে কলোনির সর্বত্রই প্রায় ফাঁকা জায়গাও দখল হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় শাসক নেতৃত্বের বদান্যতায় বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে চরম অব্যবস্থার পরিবেশ তৈরি হয়েছে এমএএমসি কলোনিতে। কোয়াটার, জায়গা,জমি বেহাত হয়ে গেলেও স্রেফ রাজনৈতিক কারণেই কী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না? প্রশ্ন উঠছে সব মহলেই। এ ব্যাপারে বিরোধী বাম-বিজেপির বক্তব্য, রাজ্য জুড়েই চরম লুঠতরাজের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের লক্ষ লক্ষ টাকা তোলাবাজির নজির তৈরি হয়েছে এই শহর-শিল্পাঞ্চলে। এসবই শাসক নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ মদতেই হচ্ছে বলে মত তাদের। তবে এ ব্যাপারে শাসক দলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।