জেলা

পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির বলি খনি শ্রমিকেরা ! জোরালো প্রশ্ন উঠেছে জনমানসে

সংবাদ সফর, বীরভূম: খনি কর্তৃপক্ষের লাগামহীন বেনিয়মেরই শিকার হলেন গরিব মানুষজনেরা? সংস্থার স্বেচ্ছাচারিতায় প্রাণ গেল খনি শ্রমিকদের? জীবন দিয়ে খনিতে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির খেসারত দিতে হল তাদের ? এ ধরনের অনিয়ম বেনিয়মের নেপথ্যে কি শাসক দল বা পুলিশ প্রশাসনের একাংশের মদত রয়েছে? সোমবার ওই খনিতে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে লোকপুর থানার গঙ্গারামচক ভাদুলিয়া কয়লা খনি প্রকল্প এলাকার আশপাশে।

এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এই খনি প্রকল্পে বেনিয়ম অনিয়মের অন্ত নেই। খনি সংক্রান্ত নিয়মবিধিকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কয়লা উত্তোলনকারী সংস্থা বেপরোয়া ভাবে তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, পানীয় জল স্বাস্থ্য পরিসেবা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার উন্নয়নে খনি কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতার কোন চিহ্ন মিলবে না। কিন্তু দিনের পর দিন কয়লা বোঝাই গাড়ি, ডাম্পার চলাচলে আশপাশের লোকালয়ের রাস্তাঘাটগুলির বেহাল দশা। অথচ মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার লোভে একপ্রকার অরাজকতার রাজত্ব কায়েম করেছে ওই সংশ্লিষ্ট কয়লা উত্তোলনকারী সংস্থা বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষজনের। অভিযোগ, প্রতিদিন কয়েক হাজার টন কয়লা খনি গর্ভ তোলা হচ্ছে। নিত্যদিন প্রায় তিন শতাধিক ডাম্পার বোঝাই ওই সব কয়লা চলে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সেক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা কামাচ্ছে ওই কয়লা উত্তোলনকারী সংস্থা। আর এসব বেআইনি কাজ কারবারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতদাতা হিসেবে শাসক দলের নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়। এসবে লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি চলছে বলে শাসক দলের অন্দরেই জল্পনা শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে সরাসরি কিছু না বললেও স্থানীয় নাকড়াকোন্দা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান লুৎফুর রহমান ওই প্রকল্পের কয়লা উত্তোলনকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অনিয়ম বেনিয়মের অভিযোগে সরব হয়েছেন। তার কথায়, আগের পঞ্চায়েত বোর্ডের কাছে ওই সংস্থা বিস্ফোরক সংরক্ষণ বা মজুত করার জন্য একটি ঘরের ‘নো অবজেকশন’ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিস্ফোরক বা বারুদ রাখার জন্য কোন নির্মাণ কাজ করেনি তারা। তবে দিনের পর দিন ঝুঁকি সত্ত্বেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ির আনাগোনা বিধিসম্মত কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পঞ্চায়েতের ওই উপপ্রধান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, কী কারনে এতগুলো গরীব মানুষের প্রাণ গেল- তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নিক সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তা না হলে আগামী দিনে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে প্রশাসনকেই বলে জানিয়ে দেন স্থানীয় নাকড়াকোন্দা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান লুৎফুর রহমান।

বলাই বাহুল্য, বিস্ফোরণের পর থেকেই এই ঘটনার এনআইএ তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক অনুপ কুমার সাহা। তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবিও তোলেন তিনি। একইসঙ্গে প্রয়োজনে আগামীদিনে এ বিষয়ে বিস্তারিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে তুলে ধরা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিধায়ক।

মঙ্গলবার বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে আসেন বিশেষ বিশেষজ্ঞদের একটি দল। ঘটনাস্থলে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেন তারা। এদিন, বাস্তবপুর ও দেবগঞ্জের মৃত খনি শ্রমিকদের অন্তোষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অন্তোষ্টিকালে শ্মশানে জেলাশাসক সহ প্রশাসনের অন্যান্য পদাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন, মৃতদের পরিবারের হাতে সরকারি অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের তরফে। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট খনি কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ঘটনার পরেই সংশ্লিষ্ট খনি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। অফিসও তালা বন্ধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই সংস্থার কোন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button