জেলা

জুয়া,সাট্টার রমরমায় জনমানসে ক্ষোভ বাড়ছে খনি শিল্পাঞ্চলে

সংবাদ সফর, অন্ডাল ও পান্ডবেশ্বর: জুয়া, অনলাইন সাট্টার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে খনি-শিল্পাঞ্চল। পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগাতেই এ ধরনের বেআইনি কাজ কারবারে সর্বস্বান্ত হতে বসেছেন সাধারণ মানুষজন। এই অভিযোগে সরগরম জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। চটজলদি আয়ের উপায় খুঁজতে প্রায় সর্বস্ব পণ করছেন একশ্রেণির মানুষজন। আর সেই ফাঁদেই পা দিচ্ছেন অনেকেই। আর তাতেই তাদের পরিবার পোষ্যরা চরম বিপদে পড়েছেন খনি শিল্পাঞ্চলে। অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর সহ খনি শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার ঠেকের কথা অজানা নয় কারও। দুর্গাপুর-ফরিদপুর থানা এলাকার মাঝিপাড়া এলাকায় জুয়ার আসরে লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা চলছে। এই আসরের ‘ কিং পিন’ এলাকারই ‘পাল’ পদবিধারী জনৈক ব্যক্তি। তারই তত্ত্বাধধানে প্রায় প্রকাশ্যেই এই খেলা চলছে। তবে গোগলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বনগ্রামের জুয়ার ঠেকের গুরুত্বই আলাদা। এই ঠেকে স্থানীয় সহ বহিরাগত পেশাদার জুয়াড়িদের ভিড় জমে। এখানেও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা চলে বলে অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়। বাদ নেই খনি-শিল্পাঞ্চলের অন্ডাল থানা এলাকা। এই থানার উখড়া ফাঁড়ির অন্তর্গত উখড়া গ্রামের সুভাষ ইনক্লাইন লাগোয়া এলাকায় প্রতিনিয়তই জুয়ার আসর বসছে। সেখানেও লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা চলছে বলে অভিযোগ। সব জেনেশুনেও প্রশাসন নির্বিকার। তবে এসব নিয়ে একেবারেই ধরপাকড় হচ্ছে না- এটা বলা যাবে না। বিক্ষিপ্তভাবে দু-একবার পুলিশি অভিযান চালানো হয়।

সম্প্রতি শীতলপুর এলাকায় হাজার পঁয়তাল্লিশ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। শৈলেন্দ্র রাম নামে জনৈক সিআরপিএফ জওয়নের বাড়িতে এই আসর বসেছিল। শৈলেন্দ্রকে পাকড়াও করতে না পারলেও ওই ঠেক থেকে জনা ছয়েক জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়। বলাই বাহুল্য, কালীপুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় মাস খানেক ধরে জুয়ায় মেতে থাকে খনি-শিল্পাঞ্চল। শ্যামসুন্দরপুর, তিলাবনী, শঙ্করপুর মোড়, পুরনো হাটতলা এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে এ ধরনের জুয়ার ঠেক বসানো হয়। তবে শুধু উৎসবের মাস নয়, সারা বছরই দুর্গাপুর-ফরিদপুর, অন্ডাল সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় চলে জুয়ার আসর। কিন্তু সেসব বন্ধে ধারাবাহিক অভিযান হচ্ছে কোথায়? এদিকে, জুয়ার পাশাপাশি অনলাইন সাট্টারও রমরমা চলছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। দুর্গাপুর, আসানসোল সহ খনি-শিল্পাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় সাট্টায় জলের মতো টাকা ঢালছেন অনেকেই। এসব দেখেশুনেও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠছে সর্বস্তরে। তবে এসব ক্ষেত্রে শাসকদলের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনার অন্ত নেই। ফলে খনি শিল্পাঞ্চলে ক্ষোভ বাড়ছে জনমানসে।

এ ব্যাপারে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি, লক্ষণ ঘোড়ুইদের বক্তব্য, রাজ্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। তাই একশ্রেণির মানুষ উপায়ন্তর না পেয়ে এই মরণফাঁদে পা দিচ্ছেন। তাতে লাভ হচ্ছে শাসকদলেরই। এসব বেআইনি কাজ কারবারের ফলে তাদের পকেট ভরছে। আসলে জুয়া, সাট্টা,কয়লা,বালি না থাকলে তৃণমূল দলটাই উঠে যেত বলে মত বিজেপি নেতৃত্বের। একই অভিযোগ বামেদেরও। এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপে শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতের অভিযোগে সরব হয়েছেন তারা। তবে বিরোধী দলের অভিযোগ মানতে চাননি জেলা তৃণমূল নেতা সুজিত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ইদানিং কালে জুয়া, সাট্টার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেন তিনি। তার কথায়, এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। সেক্ষেত্রে এসব বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা। পুলিশ প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে অভিযান চালানো হয়। আগামীদিনেও জুয়া, সাট্টার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button