কাঁটা কারবারিদের ধরা হচ্ছে না কেন? প্রশ্ন তুলছেন অভিযুক্তরা

সংবাদ সফর, দুর্গাপুর: বেআইনি লোহার কাঁটা কারবারিদের ধরা হচ্ছে না কেন? দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বেআইনি লোহার কারবার বন্ধে পদক্ষেপ কই? এমনই প্রশ্ন তুলছেন খোদ লোহাচুরিতে অভিযুক্তরাই। সম্প্রতি লোহাচুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন দুই তৃণমূল নেতা। তদন্তের স্বার্থে ধৃত তৃণমূল নেতা শুভাশিস ওরফে রিন্টু পাঁজা, অরবিন্দ নন্দীদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। এই তালিকায় আরও অনেক শাসক নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। তাদেরও সন্ধান চলছে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন। এসবের মাঝেই বুধবার বেআইনি লোহার সমেত দুজনকে পাকড়াও করে পুলিশ। কিন্তু এই অভিযুক্তরাই বেআইনি লোহা কারবারে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে বিভিন্ন অবৈধ লোহার কাঁটার ফিরিস্তিও মিলছে তাদের বক্তব্যে। তাদের কথায়, সবাই সব জানে। তাদের ধরছে না কেন? লোহা চুরির মাল কেনাবেচা সহ বেআইনি লোহার কাঁটার প্রসঙ্গ তুলে রীতিমতো ধমক দিতেও দেখা যাচ্ছে অভিযুক্তদের! বেআইনি লোহা পাচারের দায়ে অভিযুক্তদের এ হেন মন্তব্যে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন তো উঠবেই।
বলাই বাহুল্য, গত বুধবার নিউ টাউনশীপ থানার বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়ির তরফে একটি বেআইনি লোহা বোঝাই পিক আপ ভ্যান আটক করা হয়। শলক্ষাধিক টাকার লোহার সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে এ ধরনের পাচারের অভিযোগে সগড়ভাঙার মহঃ রাজা খান ও সাগর আঁকুড়েকে পাকড়াও করে পুলিশ। ধৃতদের গাড়িতে তোলার মুহূর্তেও ধৃতদের শরীরী ভাষায় ভয়ভীতির কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। অভিযোগ যাই হোক, রাজা খানরা নিজেদের লোহা চোর মানতে চাননি। রীতিমতো মাল কিনে তা গোপালপুরের কাঁটায় পাঠানো হচ্ছিল বলে সাবলীল ভঙ্গিতে জানিয়ে দেন তারা। কিন্তু এই প্রশ্নোত্তর পর্বের বাকি ভিডিও এপিসোডটা বেশ চমকপ্রদ। লোহার কাঁটায় যেখানে চুরির মাল বিকিকিনি হচ্ছে, সেখানে ধরপাকড় হচ্ছে না কেন? এ প্রসঙ্গে সরাসরি দুর্গাপুরের সেন্টুর কাঁটার কথা উল্লেখ করেন রাজা খানরা। তার মুখ থেকেই গোপালপুরের বংকার কাঁটারও নাম শোনা যায়। সবাই সব কিছু জানে। জেনেও কেউ কিছু করছেন না কেন? সাংবাদিক বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে লোহা চুরিতে ধৃতদের বাক্যবন্ধে চমক লাগারই কথা। সরাসরি লোহা চুরি প্রসঙ্গে সরাসরি সাংবাদিককে আক্রমণ করেন তারা। কিন্তু সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে করা মন্তব্যের দায় তো এড়াতে পারবে না পুলিশ প্রশাসন। কারণ চুরি,জোচ্চুরি, বেআইনি কাজ কারবার বন্ধে দায় যাদের ওপর রয়েছে, সেই পুলিশ প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিলেন ধৃতরাই- একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে ধৃতদের তরফে এ ধরনের মন্তব্য করা হলে তা বেশ চাঞ্চল্যকর বলে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেন দুর্গাপুরের এসিপি সুবীর রায়। একইসঙ্গে ধৃতদের আপাতত নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চলছে। সেক্ষেত্রে ধৃতদের তরফে এ ধরনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন ওই পুলিশ কর্তা।
উল্লেখ্য, লোহার বেআইনি কারবার সহ অবৈধ লোহার কাঁটা নিয়ে বহু অভিযোগ রয়েছে শিল্পাঞ্চলে। পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও তারা বহাল তবিয়তে তাদের বেআইনি কাজ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সার্বিকভাবে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় বার বার অভিযোগ উঠেছে। এবার চুবি বা পাচারে অভিযুক্তরাই কার্যত বুক চিতিয়ে এসব বেআইনি কার্যকলাপে সত্ত্বেও পুলিশের নীরবতায় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ্য, সম্প্রতি নবান্নে একটি বৈঠকে রাজ্যে পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে কার্যত উষ্মাপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন তিনি। তার পরবর্তীতে জেলার বেশ কিছু পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে বদলি সহ কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে আগামীদিনে অবৈধ লোহার কাঁটা বা কারবার রুখতে কী ব্যবস্থা নেয়- তা সময়ই বলে দেবে।