সংবাদ সফর, দুর্গাপুর, ১ জুন: কারখানায় কর্মী নিয়োগ বা গেট পাশ নিয়ে নেতাদের দাদাগিরি বরদাস্ত নয়। এমনকি এসব নিয়ে কারখানা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর নেতা-নেত্রীদের অহেতুক চাপ সৃষ্টি বা অসহযোগিতাতে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। শনিবার দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে প্রকারান্তরে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্য আইএনটিটিইউসি সভাপতি তথা সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার আধিকারিকদের উপস্থিতিতে সিনার্জি কমিটির বৈঠকে রাজ্য সভাপতি ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দেন, নিয়োগ বা শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়ে সদ্য গঠিত আইএনটিটিইউসির কোর কমিটির বাইরে দলের নেতা নেত্রীদের সুপারিশ বা মাতব্বরি মেনে নেওয়া হবে না। প্রসঙ্গক্রমে শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনে সদ্য সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানকারী পঙ্কজ রায় সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি আইএনটিটিইউসির কেউ নন। তবে হঠাৎই রাজ্য সভাপতির বক্তব্যে ওই তৃণমূল নেতার নাম উঠে আসা প্রসঙ্গে তেমন কোনও সদুত্তর মেলেনি। উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে দুর্গাপুর সহ তমলুকে আইএনটিটিইউসির বিশেষ কোর কমিটির কথা ঘোষণা করা হয়। দুর্গাপুরে এই কোর কমিটির মনোনীত সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দলের অন্দরে জলঘোলা শুরু হয়। কিন্তু এই আবহেও কর্মসংস্থান পোর্টালের মাধ্যমেই দুর্গাপুরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের পক্ষেই সরব হন তিনি। সেক্ষেত্রে দুর্গাপুরের বিভিন্ন কলকারখানায় স্থানীয় মানুষজন বা ভূমিপুত্রদের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে রাজ্য আইএনটিটিইউসি সভাপতি জানান, এসব নিয়ে আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা নয়। কর্মসংস্থান পোর্টালের মাধ্যমেই স্থানীয়রা কাজের সুযোগ পাবেন বলে আশাবাদী সভাপতি। এদিন ফের সিনার্জি কমিটির বৈঠকে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনে কোর কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙাস্থিত একটি বেসরকারি ও বিভিন্ন কলকারখানায় কর্মী নিয়োগ সহ শ্রমিক আন্দোলনের নামে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের নেতিবাচক কাজকর্মের অভিযোগ তোলেন তিনি। সেক্ষেত্রে দুর্গাপুরে শিল্প বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি কর্মী নিয়োগ সহ শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়ে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা বিধি কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন রাজ্য আইএনটিটিইউসি সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে বৈঠকে দুর্গাপুরের বিভিন্ন কলকারখানায় স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রসারের পক্ষে জোর সওয়াল করেন রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। একইসঙ্গে রাজ্যের সার্বিক শিল্প পরিস্থিতির উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। প্রায় একই কথা বলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তবে শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি দুর্গাপুরের সার্বিক দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। শনিবার সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে এই বৈঠকে শিল্পাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে শিল্পপতিদের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কবি দত্ত। প্রবাদপ্রতিম শ্রমিক নেতা আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়, লাবণ্য গোপাল ঘটকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিল্পনগরী দূর্গাপুরের হৃত গৌরব ফিরিয়ে সব রকমের প্রচেষ্টা চালাতে তিনি তৈরি বলে জানিয়ে দেন দুর্গাপুর নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। শনিবার এই বৈঠকে দুর্গাপুরে শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করতে সব রকমের প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন জেলাশাসক এস পোন্নামবালাম, পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী। শনিবার দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে সিনার্জি কমিটির এই বৈঠকে পুলিশ প্রশাসনের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গুপ্তা, জেলা বনাধিকারিক সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
