পার্কিংয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ শহরে

সংবাদ সফর দুর্গাপুর: লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে পার্কিংয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। কিন্তু কে কার কথা শোনে। হাজারও অভিযোগ সত্ত্বেও নিশ্চুপ প্রশাসন। এ ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করা হলেও আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের তরফে কোন সদুত্তর মেলেনি। নীরব শাসক নেতৃত্বও। এই নীরবতার নেপথ্য কারণ কী? তবে কি ক্ষমতার বলে বলীয়ান শিল্পাঞ্চলে নৈরাজ্য, স্বেচ্ছাচারিতার পরিবেশ কায়েম করতে চাইছে তৃণমূল? তবে কি এর পেছনে বড়সড় আর্থিক দুর্নীতি কাজ করছে? ফলে সব মিলিয়ে রহস্য ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে শিল্পাঞ্চলে। এদিকে, এ ধরনের মারাত্মক সব অভিযোগের আবহে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে অব্যবস্থার অভিযোগে সরব হয়েছেন সিটি সেন্টারে পার্কিংয়ের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্ণধার। সবমিলিয়ে দিনে দিনে ধোঁয়াশা বাড়ছে।
প্রথমতঃ অভিযোগ, মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ একটি সংস্থা পার্কিংয়ের নামে প্রতিদিন প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে চলেছে। সুজয় পাল ওরফে কেবু নামের বালি কারবারি ওই পার্কিং সংস্থার কর্নধার। দু-তিন বছর বেআইনি বালি কারবারের অভিযোগে ওই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মামলাও চলে। পরবর্তীতে সুজয় পাল রীতিমতো ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে পার্কিংয়ের পরিচালন সংস্থার মালিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে সুজয় পালের। কিন্তু এ ধরনের টেন্ডার বিলিবন্টনেও প্রভাবশালী শাসক নেতৃত্ব সহ পুলিশ প্রশাসনের একাংশের অপত্য কৃপা লাভ করেন তিনি। এসব নিয়ে বিরোধীরা হইচই করলেও তা খুব বেশি দূর এগায়নি।
কিন্তু এবার যা হয়েছে, তা নিয়ে গত দু-এক মাস ধরে শোরগোল শুরু হয়েছে শিল্পাঞ্চলে। টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পার্কিংয়ের নামে টাকা আদায় করে চলেছে ওই সংস্থা। পার্কিং ফি বাবদ আদায়ীকৃত টাকা কি সরকারের ঘরে জমা পড়ছে? এসব প্রশ্ন, অভিযোগ সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদন মাস খানেক আগেও এই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়েছে কি? এ ব্যাপারে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বা সিইও রাজু মিশ্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি। এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেবেন বলে আশ্বাস দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত এই টেন্ডারের মেয়াদের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। পরে রি-টেন্ডার বা রিনিউ ছাড়া পার্কিংয়ের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অবৈধ বলে অভিযোগ মাথাচাড়া দিয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়, নির্ধারিত পার্কিং ফি-এর পরিবর্তে রশিদ কেটে দ্বিগুণ টাকা তোলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ মিলেছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের কর্তাব্যক্তিদের নীরবতায় প্রশ্ন তো উঠতেই পারে।
এদিকে, এসবের মধ্যেই সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধেই চরম অব্যবস্থার অভিযোগে সুর চড়িয়েছেন ওই পার্কিং সংস্থার মালিক সুজয় পাল ওরফে কেবু। তার কথায়, নিয়মনীতি মেনেই তিনি তিন বছরের জন্য পার্কিংয়ের টেন্ডার পেয়েছেন। এর মধ্যে বেনিয়ম কিছু নেই বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে চরম অসহযোগিতার অভিযোগে সুর চড়িয়েছেন সুজয়বাবু। তার কথায়, পার্কিংয়ের নামে বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো মজুত নেই। বিদ্যুৎ, পার্কিং শেড কোন কিছুই নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে চরম অব্যবস্থা, অসহযোগিতার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সরব হয়েছেন ওই পার্কিং সংস্থার কর্নধার। সেক্ষেত্রে কৌতূহলের পারদ চড়তেই পারে, সব কিছু ঠিকঠাক চললে কেনই বা নীরব সংশ্লিষ্ট প্রশাসন? আসল সত্যটা কী? এসবের উত্তর মিলবে কি? প্রশ্ন তো থেকেই যায়।