‘ রাম-বাম’ জোটের তত্ত্বে শীলমোহর দিলেন বহিষ্কৃত বংশগোপাল!

সংবাদ সফর, দুর্গাপুর, ২৭ এপ্রিল: বিস্ফোরক বংশগোপাল! তার স্বীকারোক্তিতে বাংলায় ‘রাম-বাম’ অলিখিত জোটের তত্ত্বে ফের প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলিতে সিপিএম বিজেপি গোপন আঁতাতের অভিযোগে সরব হন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগকে কার্যত মান্যতা দিলেন সদ্য বহিষ্কৃত সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী। দল থেকে তাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর সরাসরি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সরাসরি সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সহ কালা কাজকারবারের অভিযোগে সুর চড়াতে শুরু করেছেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তথা রাজ্যের মন্ত্রী। বিজেপির সঙ্গে দলের নেতৃত্বের সখ্যতার অভিযোগ তো বটেই, তাদের বিরুদ্ধে বিজেপির কাছ থেকে সরাসরি কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ তোলেন বহিষ্কৃত ওই সিপিএম নেতা। এমনকি জেলার কয়লা সিন্ডিকেটের সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের যুক্ত থাকার অভিযোগ করেন তিনি। তবে এ সবই একটা ঝলক মাত্র, আগামীদিনে ওইসব সিপিএম নেতানেত্রীদের কালা কারবারের আদ্যোপান্ত প্রকাশ্যে আনবেন প্রয়োজনে বলেও কার্যত হুঁশিয়ারি দেন পশ্চিম বর্ধমানের একদা দাপুটে সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী। এদিন, দলের একাংশের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে এখনই অন্য কোন দলে যুক্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রাক্তন সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায়সরকারের দলবদলের সময় তাকে নিয়েও আলোচনা শুরু হয়ে যায়। এরপরে তিনিও তৃণমূলে যাচ্ছেন বলেও প্রচার চালানো হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু এখনই কোন দলে যাচ্ছেন না বলে জানান বংশগোপালবাবু। বলাই বাহুল্য, শনিবার থেকেই বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বংশগোপালের বহিষ্কার নিয়ে প্রচার শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দলের নিয়ম-নীতি ভেঙে কে বা কারা সংবাদ মাধ্যমে এ ধরনের খবর প্রচার নিয়ে সরব হন তিনি। তবে রবিবার সর্বস্তরে তার বহিষ্কারের খবর জানাজানি হতেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেন বংশগোপাল। জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের এক সিপিএম নেত্রীকে অশালীন ও অশোভন বার্তা পাঠানোর অভিযোগে বহিষ্কার করা হয় তাকে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে হুগলির ডানকুনিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের সময় বংশগোপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। যা কয়েক মাসের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা সিপিএম নেত্রীর কথায়, সাংগঠনিক কাজকর্মের নামে বংশগোপাল চৌধুরী তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অশোভন ও কুরুচিকর বার্তা পাঠাতে শুরু করেন তিনি। ওই সিপিএম নেত্রী আরও অভিযোগ করেন, দলীয় মুখপত্রের সঙ্গে কাজের সুবাদে তাকে হোয়াটস অ্যাপ নম্বরও দেওয়া হয়। সেখানেও অশালীন, অশোভন বার্তা পাঠান বংশগোপাল চৌধুরী বলে অভিযোগ। গত নভেম্বরে অভিযোগকারিণী মুর্শিদাবাদ জেলা সিপিএম নেতৃত্বের কাছে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানান। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলীয় স্তরে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় রবিবার বামেদের ব্রিগেড সমাবেশের পর সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা সম্পর্কিত স্ক্রিনশট ও অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ দল থেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব বলে জানা গিয়েছে। দলের অবস্থান স্পষ্ট করে সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা বলেন, দল কখনও কারও অনৈতিক বা অন্যায় আচরণকে প্রশ্রয় দেয়নি। দলের নীতি ও মর্যাদা রক্ষায় বংশ গোপালকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এ ব্যাপারে সিপিএম জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় জানান, দলীয় মুখপত্রে যা লেখা হয়েছে, তা নিয়ে আর কোন মন্তব্য করবেন না। একইসঙ্গে বহিষ্কারের পর তার বক্তব্যের কোন মূল্য নেই বলেও সরাসরি জানিয়ে দেন তিনি। এ ব্যাপারে রাজ্য বিজেপি নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত বংশগোপালকে আপাদমস্তক দুর্নীতিপরায়ণ নেতা হিসেবে অভিহিত করেন। বহিষ্কৃত ওই সিপিএম নেতার তরফে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিজেপির সঙ্গে সখ্যতার দাবিও খারিজ করে দেন তিনি। বিগত নির্বাচনে বাংলায় বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিল বামেরা বলে অভিযোগ করেন ওই বিজেপি নেতা। একইসঙ্গে বহিষ্কৃত সিপিএম নেতা বংশগোপালের তৃণমূলের যোগদানের সম্ভাবনার বিষয়ে জোরালো যুক্তি পেশ করেন কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তবে এ ব্যাপারে রাজ্য তৃণমূল সম্পাদক ভি শিবদাশন দাশু বংশগোপালের তরফে বাম নেতাদের বিজেপির সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগকে সমর্থন করেন রাজ্য তৃণমূল সম্পাদক ভি শিবদাশন দাশু। সেক্ষেত্রে বিগত নির্বাচনগুলিতে সিপিএম- বিজেপি জোটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি। তবে আগামীদিনে বংশগোপালকে তৃণমূলের ঝান্ডা হাতে দেখা যাবে কি না- তা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাশন দাশু।