দলের দৈন্যদশা ঘোচাতে কোর কমিটি! জল্পনা চরমে

সংবাদ সফর, দুর্গাপুর, ২০ মে: দলের দৈন্য দশা দুর্গাপুরে! জেলার শিল্প কেন্দ্রীক এই শহরে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের হাল ধরার মত কাউকেই খুঁজে পাওয়া গেল না! শেষমেষ দুর্গাপুরের আইএনটিটিইউসিতে বীরভূমের কোর কমিটি মডেল লাগু হয়ে গেল। এবার ১২ জনের কোর কমিটির সদস্যর হাতেই সংগঠনের ভূত ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এমনই ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই কমিটিতে মনোনীত সদস্যদের সংযোজন নিয়েও দলের অন্দরে জলঘোলা শুরু হয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও ১২ জনের এই দলে প্রাক্তন জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি বিশ্বনাথ পারিয়াল, প্রভাত চট্টোপাধ্যায়, বর্তমান জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ দীপঙ্কর লাহাদের মত তৃণমূল শ্রমিক নেতাদের আইন হয়নি এই তালিকায়। পরিবর্তে যাদের আনা হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি ও দক্ষতা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। যদিও নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে বলে সরাসরি জানিয়ে দেন শাসক নেতৃত্ব। বলাই বাহুল্য, মাসখানেক আগে জেলার দুই মন্ত্রী সহ সর্বোচ্চ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে জেলা আইএনটিটিউসি সংগঠন নিয়ে রীতিমত খুব উগরে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোর কমিটির ঘোষণার মাধ্যমে তারই প্রতিফলন ঘটল- একথা বলাই যায়। উল্লেখ্য, দুর্গাপুর সহ জেলা আইএনটিটিইউসি বারবার শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। একের পর এক সভাপতি বদল করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের জয় জয়কার হলেও দুর্গাপুরের বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বিজেপির পেছনে চলে যায় তৃণমূল। তবে শুধু লোকসভা নির্বাচনই নয়, বিগত বিধানসভা নির্বাচনেও দুর্গাপুরের সার্বিক ফল কোনভাবেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে। এবার কোর কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক চেহারা বদলের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে তা কতটা কার্যকর হয়, সেটা সময়ই বলে দেবে। বলাই বাহুল্য, দুর্গাপুরে তৃণমূলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে পুর নিগম নির্বাচনে যেতে সাহস করছে না শাসক দল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সেক্ষেত্রে সংগঠনে দুর্গাপুরের শ্রমিক সংগঠনের সংকট কাটাতে কোর কমিটি কতটা কার্যকর হয় তা নিয়ে দলের অন্দরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ কোর কমিটির মনোনীত সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলেছেন দলেরই কর্মী সমর্থকেরা। উল্লেখ্য, আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোর কমিটির চেয়ারপার্সেন করে মোট ১২ জনের কোর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঋতব্রত ছাড়া ১১ জনের এই তালিকায় রয়েছেন মানস অধিকারি, রাজেশ কোনার, ভুবনেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সুশান্ত রায়, লিটন সরকার, অভিষেক দে, হরদীপ সিং, দেবব্রত কেশ, পূর্ণনন্দ চট্টরাজ, সেখ আমিনুর রহমান ও আকবর আলি। আগামী বৃহস্পতিবার রাজ্য আইএনটিটিইউসি সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরে কোর কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে খবর মিলেছে। কোর কমিটি গঠন প্রসঙ্গে ঋতব্রতর বক্তব্য, দলের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করবেন তিনি। এবার দুর্গাপুরে সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখতে মাসে তিনবার আসার কথাও জানান রাজ্য সভাপতি। কোর কমিটি ঘোষণার পরেই বর্তমান জেলা কমিটির সভাপতি অভিজিৎ ঘটক সহ অন্যান্য পদাধিকারীদের কোন গুরুত্ব রইল না- বলাই চলে। এসবের পাশাপাশি দুর্গাপুরের কোর কমিটিতে দীপঙ্কর লাহার অনুপস্থিতিতে জেলায় মলয় লবির গুরুত্ব কমতে শুরু করেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন দলেরই কেউ কেউ। জেলা তৃণমূল সভাপতি হিসেবে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পুনর্বহালের পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠন থেকে মলয় অনুগামীদের নাম বাদ পড়া নিয়েও জলঘোলা কম হচ্ছে না। কিন্তু এসব নিয়ে তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশুর একটাই বক্তব্য, খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে দুর্গাপুর ও তমলুকের কোর কমিটি ঘোষণা করেছেন। সেক্ষেত্রে এ নিয়ে কোন রকমের বিতর্কের অবকাশ নেই। সবাইকে একসঙ্গে একজোট হয়ে নেত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করতে হবে বলে সরাসরি জানিয়ে দেন তিনি। ( ছবি: তমলুকে কোর কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়)