শিল্পাঞ্চল

দুর্নীতির দায়ে বলি যোগ্যরা! সুপ্রিম রায়ে প্রশ্ন জনমানসে

সংবাদ সফর, এপ্রিল,দুর্গাপুর: সুপ্রিম রায়ে চাকরি গেল শিক্ষকদের। কাজ হারিয়েছেন অশিক্ষক কর্মীরাও। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য। চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছেন চাকরি হারা শিক্ষক অশিক্ষক কর্মীরা। বাদ পড়েনি দুর্গাপুর, কাঁকসাও। দুর্গাপুরের নেপালি পাড়া হিন্দি হাই স্কুলের আটজন শিক্ষক ও জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের চারজন শিক্ষক কাজ হারিয়েছেন। একইসঙ্গে কাঁকসার দুটি স্কুলে মোট মোট চারজন কাজ হারিয়েছেন বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অথৈ জলে পড়ে গিয়েছেন সকলেই। ভবিষ্যৎ ভাবনার পাশাপাশি কাজ হারানোর লজ্জায় ভেঙে পড়েছেন শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা। সকলেরই একটাই প্রশ্ন, কি দোষ করেছি আমরা? শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির দায়ে কেন তাদের বলি হতে হল? বলাই বাহুল্য, শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে বহু মামলা হয়েছে। এই পরিসরে যোগ্য কর্মপ্রার্থীরা চাকরির দাবিতে মাসের পর মাস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সহ আদালতের পর্যবেক্ষণে শিক্ষক- অশিক্ষক নিয়োগে চরম দুর্নীতির হদিশ মেলে। এসবের জেরে ২০১৬ সালের নিয়োগের পুরো প্যানেলটাই বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় হাইকোর্ট। এই মামলা সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়ায়। অবশেষে কিছু সংশোধন করে কলকাতা হাইকোর্টের সেই রায়ই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায়ে ২৫ হাজার ৫৭২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এই তালিকায় দুর্গাপুরে নেপালি পাড়া হাইস্কুলের আট জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন। জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের চারজন সহ কাঁকসা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও কাঁকসা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট চারজনের নাম রয়েছে। এমনিতেই এইসব স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকা নেই। অশিক্ষক কর্মীদের সংখ্যাও যথেষ্ট নয়। তার মধ্যে এ ধরনের সুপ্রিম নির্দেশে স্কুলের সুস্থ পঠনপাঠনের পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হবে বলে, কার্যত হতাশা প্রকাশ করেছেন নেপালি পাড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডক্টর কলিমুল হক, জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জয়নুল হক সহ কাঁকসা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল নন্দীরা। শঙ্কা প্রকাশের পাশাপাশি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে রীতিমত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জয়নুল হক। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মন্তব্য না করলেও সহকর্মী শিক্ষক শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের চাকরি হারানোর বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন কাঁকসা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল নন্দী। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের চাকরিহারাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ সংক্রান্ত নির্দেশে আশাবাদী তিনি। সেক্ষেত্রে তারা আবার স্বস্থানে ফিরে এলে সেটাই হবে সবচেয়ে সুখের দিন বলে জানান কাঁকসা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক উজ্জ্বল নন্দী। এদিকে, এসবের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে শাসক বিরোধী তরজা চরমে উঠেছে। আপাতত এসবের দায় নিয়ে একে অপরের কোর্টে বল ঠেলাঠেলি শুরু করেছেন তারা। তবে এসবের ক্ষেত্রে সরকার যেমন দায় এড়াতে পারেন না, যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ চাকরি হারা অশিক্ষক কর্মীদের রুজি রুটি ফিরিয়ে দিতে বিরোধীরাও কী দায়িত্ব পালন করেন- তা সময়ই বলে দেবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button