শিল্পাঞ্চল

মস্ত মস্ত মাফিয়া রাজ? প্রাণহানির আশঙ্কা প্রতিবাদে!

সংবাদ সফর, এপ্রিল, দুর্গাপুর: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিই সার। ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে রয়েছে প্রশাসন! আর নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বেআইনি বালি কারবারের রাজত্ব কায়েম করেছে মাফিয়ারা। তবে কি বালি মাফিয়া দের বাগে আনা যাচ্ছে না? না কি আনা হচ্ছে না? কোন ক্ষমতার বলে বালির অবৈধ কারবারিরা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর সাহস দেখাচ্ছেন? কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশ প্রকৃতির সর্বনাশের খেলায় মত্ত মাফিয়ারাই কি প্রশাসনের নেপথ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করছে? এসব প্রশ্নই ফের জোরালো হচ্ছে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে তো বটেই, এ ধরনের লুঠের কারবারে শাসক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে খনি শিল্পাঞ্চলে। জেলায় দু-দুজন মন্ত্রী। তৃণমূলের বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যাও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এসব কি তাদের নজরে পড়ছে না? তারা কি কিছুই জানেন না? প্রশ্ন তো উঠবেই। তবে এসব নিয়ে প্রতিবাদের ফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে। প্রতিবাদের ফলস্বরূপ জেল জরিমানার পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটতে পারে। এমনই আশঙ্কায় ফের সরব ভূমি রক্ষা কমিটি। সেক্ষেত্রে গত ১৯ মার্চ পরিবেশ রক্ষার দাবীতে ভূমি রক্ষা কমিটির আন্দোলনকারীদের চরম পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়ার পেছনেও পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে বালি মাফিয়াদের ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব উঠে আসছে। মঙ্গলবার অন্ডাল ব্লকের শ্রীরামপুর বালিঘাটে বেপরোয়া বালি উত্তোলন সহ এসব নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফের ময়দানে নামল ভূমি রক্ষা কমিটি। এদিন, ভূমি রক্ষা কমিটির তরফে মহকুমা শাসকের কাছে দাখিল করা স্মারকলিপিতে পরোক্ষে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১২ মার্চ কমিটির তরফে মহকুমাশাসকের কাছে এ ধরনের বেআইনি বালি কারবার বন্ধের আবেদন জানানো হয়। তার তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস মেলে। সেই মোতাবেক মহকুমা প্রশাসনের তরফে এ ধরনের বেআইনি কারবার বন্ধে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পরিস্থিতির বদল হয়নি মোটেই। সেক্ষেত্রে বেপরোয়া বালি উত্তোলনের ফলে অতীতে দামোদরের গভীর খাতে মৃত্যুর ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আজও বালির বেআইনি কারবার বন্ধ করা যায়নি বলে অভিযোগ ভূমি রক্ষা কমিটির। একইসঙ্গে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যোগসাজসে প্রকাশ্য দিবালোকে এসব বেআইনি কারবার চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি এসব নিয়ে প্রতিবাদের জেরে কমিটির সদস্যদের মিথ্যা মামলায় জেল পর্যন্ত খাটানো হয়েছে। প্রতিবাদের ফলস্বরূপ আগামীদিনে তাদের প্রাণহানিও ঘটতে পারে বলে ভূমি রক্ষা কমিটির তরফে ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ ধরনের বেআইনি কারবার সহ প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষায় ময়দান ছাড়তে নারাজ বলে জানান তিনি। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহকুমা শাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বেআইনি কাজ কারবার কখনই বরদাস্ত করে না দল। সেক্ষেত্রে পুলিশ সহ-সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এমনকি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত দলের নেতা-নেত্রীরাও ছাড় পাবেন না বলে জানান শাসক নেতৃত্ব। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, অভিযোগ উঠলেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস মেলে প্রশাসন সহ শাসক নেতৃত্বের তরফে। কিন্তু অবস্থার বদল হয় না। অভিযোগ, মোটা মোটা টাকার বিনিময়ে পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একাংশ নিজেদের বিক্রি করে ফেলেছেন। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে সরকার সহ পরিবেশ প্রকৃতিকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিচ্ছেন তারা। আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে মরিয়া বালি মাফিয়ারা। ফলে খনি শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ‘মস্ত মস্ত মাফিয়ারাজ’-এর ছবি ফুটে উঠছে প্রকাশ্যে। আর এসবের প্রতিবাদ করলেই জেল জরিমানা তো বটেই, সাধের প্রাণটুকুও চলে যেতে পারে। এমনই আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে শিল্পাঞ্চলে। তবে জীবন বিপন্ন সত্বেও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন থেকে পিছু হঠতে নারাজ ভূমি রক্ষা কমিটি বলে সাফ জানিয়ে দেন ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button