সংবাদ সফর, দুর্গাপুর: সিপিএম ত্যাগী পঙ্কজ রায় সরকারের প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা সংক্রান্ত এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এই পোর্টালে। সেই প্রতিবেদনের সম্ভাবনার তত্ত্বকেই কার্যত সিলমোহর দিল শাসক নেতৃত্ব। তবে ওই প্রতিবেদনে মহিলা সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পঙ্কজপত্নী শ্রীলেখা রায়সরকারকে আনা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তাকে ওই ব্যাংকের পরিচালন সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাখা হয়েছে। তবে আগামী দিনে পঙ্কজ পত্নীকেই ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।
উল্লেখ্য, সোমবার মহিলা সমবায় ব্যাংকের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য সদস্যাদের নাম ঘোষণা করা হয়। ১৩ জনের এই কমিটিতে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যান পদে রাখা হয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী অসীমা চক্রবর্তীকে। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে আনা হয়েছে সদ্য সিপিএম ত্যাগী পঙ্কজ রায় সরকারের স্ত্রী শ্রীলেখা রায় সরকারকে। এসব নিয়েই তৃণমূলের অন্দরে জলঘোলা শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, সদ্য সিপিএম ছেড়ে আসা নেতাদের গুরুত্ব দেওয়ায় দলের দুর্দিনের নেতাকর্মীদের ভাবাবেগে আঘাত লাগবে। তাদের মনে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ চেয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এ ধরনের অনৈতিক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তাদের বক্তব্য, বর্তমানে ভাইস চেয়ারম্যান রাখা হলেও পরিস্থিতি বুঝে আগামীদিনে শ্রীলেখা রায়সরকারকে চেয়ারম্যান পদে বসানো হতে পারে। এমনই অভিযোগ আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন তারা।
বলাই বাহুল্য, এর আগে বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান পদে পঙ্কজ রায় সরকারকে আনা হচ্ছে বলে তৃণমূলের অন্দরে জোর গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। জেলার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে সদ্য তৃণমূলের যোগদানকারী প্রাক্তন সিপিএম নেতার সমর্থনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ করা হয় বলে অভিযোগ মেলে। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মজুমদারকে সরিয়ে পঙ্কজ রায় সরকারকে আনার সুপারিশ না মঞ্জুর হয়ে যায় বলে খবর মেলে। কিন্তু তৃণমূলের যোগদানের পুরস্কারস্বরূপ ওই নেতার স্ত্রীকে মহিলা সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে মাসখানেক আগে দলীয় সূত্রেই জানা যায়। এসব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয় সবুজ সফরের প্রতিবেদনে। সপ্তাহখানেক আগে সিপিএমত্যাগী পঙ্কজ রায় সরকারকে দলের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরে জলঘোলা শুরু হয়। যদিও এ ধরনের খবরের বিভ্রান্তি কাটাতে আসরে নামেন তৃণমূলের রাজ্য নেতা ভি শিবদাসন দাশু। দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার লিস্টের সংশোধনের কাজে তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসবের জের কাটতে না কাটতেই ফের আলোচনায় উঠে এলেন পঙ্কজ রায় সরকার। তার স্ত্রী শ্রীলেখা রায় সরকারকে মহিলা সমবায় ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পদে আনা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একাংশ। তাদের বক্তব্য, ৩৪ বছরের সিপিএম তথা বাম শাসনের সন্ত্রাস থেকে বাংলাকে বাঁচাতে মরণপণ লড়াই করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম জমানাতে সিপিএম নেতানেত্রীদের চরম অত্যাচারের মুখে পড়তে হয়েছে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের। আজ জার্সি বদল করে তারাই আবার তৃণমূলের শাসনদণ্ড হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। এর ফল আগামীদিনে ভালো হবে না বলে জানিয়ে দেন শাসক নেতৃত্বের একাংশ।
যদিও এসব নিয়ে জেলা তৃণমূল সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে কোন প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মহিলা সমবায় ব্যাংকের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা জেলা মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী অসীমা চক্রবর্তী এ সব অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি জানান, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে তিনি প্রস্তুত। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ মেনে মহিলা সহ সাধারণ মানুষজনের আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন সহ মহিলা সমবায় ব্যাংকের সার্বিক বিকাশে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে জানান ওই মহিলা নেত্রী।
এদিকে, এসব নিয়ে বিরোধী বিজেপি নেতৃত্ব কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। পশ্চিম বর্ধমান জেলা বিজেপির সহ সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগেও মহিলা ব্যাংকের পরিচালন সমিতি সিপিএমের হাতে ছিল। এবারেও ব্যাংকের পরিচালন ভার সিপিএমের হাতেই রইল। বক্তব্যের সমর্থনে ওই বিজেপি নেতা ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাক্তন সিপিএম নেতার স্ত্রী শ্রীলেখা রায় সরকারের মনোনয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে আগামীদিনে সিপিএম নেতারা তৃণমূল দল পরিচালনা করবেন বলে কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন জেলা বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়।
