বেআইনি বালি বন্ধে আমরণ অনশন শিল্পাঞ্চলে!

সংবাদ সফর, দুর্গাপুর, ১১, জুন : পরিস্থিতি কি বদলাবে? খনি শিল্পাঞ্চলে বেআইনি বালি কারবার বন্ধের দাবিতে আন্দোলন এবার কি অন্য মাত্রা নিতে চলেছে? উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দামোদর, অজয়, কংসাবতী সহ বিভিন্ন নদনদীতে বালি মাফিয়াদের বাড়বাড়ন্তের অভিযোগে সুর চড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনকি এ ধরনের বালির বেআইনি কারবার বন্ধে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন তিনি। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে মন্ত্রীর সঙ্গে এক প্রস্থ আলোচনাও সারেন বিরোধী দলনেতা। অন্যদিকে, বেআইনি বালি কারবারের বিরুদ্ধে কোমর কষে ময়দানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভূমি রক্ষা কমিটি। এমনকি খনি শিল্পাঞ্চলে বেআইনি বালি কারবার বন্ধের দাবিতে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রী ডাঃ মানস ভূঁইয়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের অবহিত করেছে ভূমি রক্ষা কমিটি। ফলে সব মিলিয়ে ফের দুর্গাপুরে দামোদরের শ্রীরামপুর সহ বিভিন্ন ঘাট থেকে বেআইনিভাবে বালি উত্তোলনের অভিযোগে জোরদার আন্দোলনের মহড়া শুরু হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন শিল্পাঞ্চলের মানুষজন। বলাই বাহুল্য, দুর্গাপুরের ৩৫ নং ওয়ার্ডের গোপালমাঠ সহ শিল্পাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিবেশ প্রকৃতি সহ জনজীবন রক্ষায় ধারাবাহিক আন্দোলনে নেমেছে ভূমি রক্ষা কমিটি। এসবের কারণে প্রতিনিয়ত পুলিশি ও আইনি হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে কমিটির সদস্যদের বলে দাবি করেছেন ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তাতেও দমানো যায়নি তাদের। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, গোপালমাঠ লাগোয়া দামোদরের তীরবর্তী শ্রীরামপুর সহ বিভিন্ন ঘাট থেকে বেআইনিভাবে বালি উত্তোলনের সচিত্র তথ্য প্রমাণ সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হয়েছিল দফায় দফায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও দপ্তরেও বিষয়টি সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। তার কথায়, এ ধরনের বেআইনি কারবারের ফলস্বরূপ একের পর এক যুব কিশোরের প্রাণ দামোদরের গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও হুঁশ ফিরছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। সেক্ষেত্রে মোটা অর্থের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও প্রশাসন সহ শাসক নেতৃত্বের একাংশ নিজেদের বিক্রি করে ফেলেছেন। ফলে বেপরোয়া বালি মাফিয়ারা পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস তো বটেই, শিল্পাঞ্চলের তরতাজা প্রাণের মারণ খেলায় মেতেছে বলে অভিযোগ ভূমি রক্ষা কমিটির। উল্লেখ্য, বেআইনি বালি,ভূগর্ভস্থ জলের অপব্যবহার, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার তরফে বায়ু দূষণ, বিদ্যুৎ মাসুল বৃদ্ধির অভিযোগে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ভূমি রক্ষা কমিটি। এমনকি দুর্গাপুরের ভূমিপুত্রদের সার্বিক অধিকার রক্ষায় ময়দানে নেমেছেন কমিটির সদস্যরা। তাদের আন্দোলন সাড়া ফেলেছে জনমানসে। এবার জেলা থেকে শুরু করে রাজ্যের সর্বোচ্চ স্তরে বেআইনি বালি বন্ধের দাবিতে চিঠিচাপাটি চলছে জোরকদমে। সেক্ষেত্রেও সাড়া না মিললে আমরণ অনশনে নামতে বাধ্য হবেন বলে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবেশ প্রকৃতি সহ জনজীবন রক্ষায় আপোষহীন আন্দোলনের কারণে তাদের জীবনহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে বালি মাফিয়া বা দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ খোয়ানোর পরিবর্তে জনস্বার্থে আমরণ অনশনেই জীবন ত্যাগের অঙ্গীকার নিয়েছেন ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্যরা বলে জানান ধ্রুবজ্যোতিবাবু। প্রসঙ্গক্রমে দামোদর, অজয়, কংসাবতী সহ বিভিন্ন নদনদীতে বেআইনি বালি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতার পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি। তবে একইসঙ্গে বেআইনি বালি কারবার বন্ধে শুধু কাগজে বিবৃতি বা বক্তব্য নয়, সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে বিরোধী দলনেতাকে। সেক্ষেত্রে আগামীদিনে এ ধরনের বেআইনি কাজ কারবার বন্ধে বিরোধী দলনেতার সদর্থক আন্দোলনের পাশে থাকবেন খনি শিল্পাঞ্চলের মানুষজন বলে আশাবাদী ভূমি রক্ষা কমিটি। তবে বিরোধী দলনেতার অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে রাজ্য তৃণমূল সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশু বলেন, চমক ধমক লাগিয়ে নিজের পকেট গরম করার রাজনীতি শুরু করেছেন বিরোধী দলনেতা। জেলা সহ রাজ্যে কোন কিছুই বেআইনিভাবে হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।