টেন্ডার ছাড়াই পার্কিং ফি আদায়! অভিযোগে শোরগোল শিল্পাঞ্চলে

সংবাদ সফর দুর্গাপুর: এ কী কান্ড! দিনেদপুরে ডাকাতি! সৌজন্যে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ! নিয়ম বহির্ভূতভাবে পার্কিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা আদায়ীকৃত টাকা কার পকেটে ঢুকছে? পরোক্ষভাবে সরকারি রাজস্ব আয়ের অংশ কি তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তাব্যাক্তিদের ভাঁড়ার ভর্তি হচ্ছে?
এমনই অভিযোগে শোরগোল শুরু হয়েছে শিল্পাঞ্চলে।
অভিযোগ, মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ একটি সংস্থা পার্কিংয়ের নামে প্রতিদিন প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে চলেছে। সুজয় পাল ওরফে কেবু নামের বালি কারবারি ওই পার্কিং সংস্থার কর্নধার। দু-তিন বছর বেআইনি বালি কারবারের অভিযোগে ওই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মামলাও চলে। পরবর্তীতে সুজয় পাল রীতিমতো ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে সিটি সেন্টারের বিভিন্ন এলাকায় পার্কিংয়ের পরিচালন সংস্থার মালিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে সুজয় পালের। কিন্তু এ ধরনের টেন্ডার বিলিবন্টনেও প্রভাবশালী শাসক নেতৃত্ব সহ পুলিশ প্রশাসনের একাংশের অপত্য কৃপা লাভ করেন তিনি। এসব নিয়ে বিরোধীরা হইচই করলেও তা খুব বেশি দূর এগায়নি।
কিন্তু এবার যা হয়েছে, তা তো রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পার্কিংয়ের নামে টাকা আদায় করে চলেছে ওই সংস্থা। উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত এই টেন্ডারের মেয়াদের সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। পরে রি-টেন্ডার বা রিনিউ ছাড়া পার্কিংয়ের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অবৈধ বলে অভিযোগ মাথাচাড়া দিয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়, নির্ধারিত পার্কিং ফি-এর পরিবর্তে রশিদ কেটে দ্বিগুণ টাকা তোলা হচ্ছে। এমনকি মোটা টাকা বিনিময় মূল্যে পার্কিং ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন দোকান চলছে পুরোদমে বলে অভিযোগে সোচ্চার বিজেপি, কংগ্রেস শিবির।
বলাই বাহুল্য, শহর পরিচ্ছন্ন করা নামে পুজোর আগে সিটি সেন্টার সহ বিভিন্ন এলাকায় লাগাতার ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় উৎসবের প্রাক্কালে শহরের একশ্রেণির হকার, দোকানদারেরা অসহায়, সম্বলহীন হয়ে পড়েন। একদিকে, যখন প্রায় রুজিরুটি হারিয়ে সেসব পরিবারের লোকজনেরা চোখের জল ফেলছেন, অন্যদিকে তখন সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফেঁপে ফুলে উঠছে মাফিয়া, দুর্নীতিবাজরা। সব জেনেশুনেও প্রশাসন নীরব? তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? তবে কি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের বেআইনি কারবারের মদতকারী প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরাই? এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বস্তরে। সরকারি সন্ত্রাসের সঙ্গে সরকারি দুর্নীতির ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে রাজ্যে। খুন,জখম, লুঠপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে বাংলায় বলে সোচ্চার বিরোধীরা। তবে এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন সহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
বলাই বাহুল্য, এর আগেও সরকারি জমিবাড়ি জবরদখলে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের হাত রয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে তার অসহায়তার কথা তুলে ধরেন তৎকালীন চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে এডিডিএ-র নিষ্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। এবারেও পার্কিং নিয়ে এ ধরনের বেআইনি কাজকর্মের অভিযোগে সরব শিল্পাঞ্চল। একটি অনুষ্ঠানে থাকার কারণে এ ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে কিছু জানাতে পারেননি নয়া চেয়ারম্যান কবি দত্ত। তবে রি-টেন্ডার বা রিনিউ ছাড়া মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ সংস্থার তরফে পার্কিং ফি আদায় বেআইনি বলে জানিয়ে দেন তিনি। এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমানসে। কোন গোপন বা অলিখিত মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতেই কি ওই সংস্থা পার্কিংয়ের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন? সেক্ষেত্রে কাদের অনুমতিক্রমে এই বেআইনি ব্যবস্থা চলছে? এসবের নেপথ্য নায়ক কে বা কারা? এ ধরনের চুক্তি কি ন্যায়সঙ্গত? এসবের ফলে কাদের পকেট ভারি হচ্ছে? আসল সত্যটাই বা কী- তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে খনি শিল্পাঞ্চলে।