সম্পাদকীয়

পুলিশি ‘কালা’ সিস্টেমের বলি সিভিক ভলেন্টিয়াররা?

সিভিক ভলেন্টিয়ার। আগে বলা হত সিভিক পুলিশ। বর্তমানে পুলিশ তকমা পালটে ভলেন্টিয়ার হয়েছে। কিন্তু তাতে কী! রাজ্যে তারা আধা পুলিশ হিসেবেই পরিচিত। পুলিশ প্রশাসনের অনেকটাই সামলে নেয় তারা। ঘরে-বাইরে তারা রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে দিনে দিনে। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের পুলিশ কর্তাদের মতো আচরণও করেন সময় বিশেষে। সেক্ষেত্রে তাদের খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে না। কারণ অস্থায়ী চাকরি, ভাতা বা বেতনও খুব একটা বেশি নয়। থানার বাবুদের নেক নজরে থাকতে ভালোমন্দ সবেতেই ঘাড় নাড়ানো ছাড়া উপায় নেই এইসব আধা পুলিশ কর্মীদের। সামান্য বেতন বা ভাতার পাশাপাশি বাবুদের দাক্ষিণ্য সিভিক ভলেন্টিয়ারদের বাড়তি পাওনা বলাই চলে। তাতে কিছু উপরিও মিলে যায়। বাবুদের সঙ্গ দিলে সারাদিনে জলপান সহ চা, পান, বিড়ির খরচটাও বেঁচে যায় আর কী! ফলে চরম বেকারত্বের যুগে ওটাও তাদের কাছে ‘ওপরওয়ালার প্রসাদ’ বলে মেনে নিতে হয়।

দিনের বেলাতে খুব একটা সক্রিয় অবস্থায় দেখা না গেলেও দিনের শেষে শহর, মফস্বলের বড় রাস্তার ধারে এ ধরনের সিভিক কর্মীদের দেখা মিলবেই। সার বেঁধে লরির লাইন। দূরে পুলিশ নামাঙ্কিত একটি গাড়ি। খাঁকি উর্দিধারী কর্তাকর্মীরা সাধারণত গাড়িতেই বসে থাকেন। আর রাস্তায় তখন সচল থাকেন সিভিক ভলেন্টিয়াররা। চেকিং থেকে শুরু করে কালেকশন- সবটাই তাদের দিয়েই হচ্ছে। আসলে পুলিশ প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সব মহলেই। পুলিশের কর্তাকর্মীদের ‘উপরি’ কামাই নিয়ে বহু ঘটনার কথা বলা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর হেরফের হয়েছে, কিন্তু পুলিশি ব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। সেদিনও যা ছিল, আজও তাই রয়েছে।

এককথায়, পুলিশি ব্যবস্থায় এই অলিখিত প্রথা ধারাবাহিক ভাবে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। অলিখিত এই ‘কালা’ সিস্টেমের দুর্বার গতিতে গা ভাসাতে হচ্ছে সিভিক ভলেন্টিয়ারদেরও। না চাইলেও তাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এই ব্যবস্থার পাঁকে। এ ব্যবস্থায় তাদের গড়েপিঠে নিতে পথে নামানো হয়েছে। যুব-কিশোরদের নয়া মগজে দুর্নীতির তেলকালি মাফিয়ে তৈরি করে নেওয়া হচ্ছে গোটা সিভিক কর্মীসমাজকে। কী নিদারুণ পরিণতি দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এইসব ছেলেমেয়েরা। নতুন প্রজন্মের তরতাজা প্রাণগুলিকে কিভাবে আমাদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে বলি দিচ্ছি- তা ভাবতেও লজ্জ্বা হয়। পেটের টানে, দুটো পয়সা রোজগারের আশায় তারাও তাদের নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

উন্নত সমাজ, উন্নত মানবজাতি গড়ার অঙ্গীকার করে এ কোন সমাজ গড়তে আমরা মনপ্রাণ নিবেশ করেছি? রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে এইসব কমবয়সিদের উদ্ধত, বেপরোয়া জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছি প্রতিনিয়ত। ন্যায়,নীতি, মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে তাদেরকে কালা সিস্টেম পরিচালিত যন্ত্রে পরিণত করছি। বলতে আপত্তি নেই, ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে কর্মসংস্থান ও পুলিশি ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব মেটানোর লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিভিক ভল্যান্টিয়ার পদের সূচনা করেন। তাতে পুলিশ প্রশাসনরে কাজের চাপ অনেকটাই শিথিল হয়েছে। থানায় থানায় কাজের পরিবেশ কিছুটা স্বচ্ছ¨ হয়েছে বলাই চলে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেককেই কালা সিস্টেমে হাত পাকাতে বাধ্য করছি আমরা। কারণ আগামীদিনে প্রচলিত পুলিশ সমাজের প্রতিচ্ছবি হতে হবে। পুলিশ নামধারী সমাজরক্ষক(!)দের যোগ্য উত্তরসূরি হতে এ লড়াই যে বাঁচার লড়াই ‘সিভিক’ কর্মীদের কাছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button