শিল্পাঞ্চল

পরিবেশ সংক্রান্ত বৈঠককে ‘প্রহসন’ আখ্যা ভূমি রক্ষা কমিটির

সংবাদ সফর, দুর্গাপুর, ২৫, জুন: একদিকে যখন খনি শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ নিয়ে প্রশাসনের কার্যকারিতার প্রমাণ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা, অন্যদিকে তখন এ ধরনের বৈঠকের সারবত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ভূমি রক্ষা কমিটি। সাধারণ মানুষজনকে বোকা বানাতে এসবই ‘নাটক বা প্রহসন’ বলে কার্যত কটাক্ষ করেন কমিটির সদস্যরা। বুধবার দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক দপ্তরের কনফারেন্স হলে পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ কীর্তি আজাদ, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নামবালাম, জেলা বনকর্তা, দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক ডঃ সৌরভ চট্টোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিরা। সাংসদ থেকে শুরু করে জেলাশাসক সকলেই পরিবেশ রক্ষায় সরকার তথা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আলোকপাত করেন। পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষায় বৈঠকে উপস্থিত একশোর বেশি শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিদের বৃক্ষরোপনের উপর গুরুত্ব আরোপের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ কীর্তি আজাদ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে শিল্পের প্রসার ঘটছে। কিন্তু পাশাপাশি জনজীবনের স্বার্থে পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফে বলে দাবি করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নামবালাম বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধে প্রশাসনের তরফে সতর্ক নজরদারি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নজরদারির লক্ষ্যে দুর্গাপুর, আসানসোল সহ জেলাস্তরে মনিটরিং কমিটিরও উল্লেখ করেন তিনি। তার কথায়, এ পর্যন্ত পরিবেশ সংক্রান্ত তিনটি বৈঠক করা হয়েছে। কোনভাবেই পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত কোনো গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও আশ্বাস দেন জেলাশাসক। তবে বুধবার যখন সাংসদ সহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকারিতা প্রসঙ্গে তাদের ভূমিকা জাহির করছেন, অন্যদিকে পরিবেশ নিয়ে এ ধরনের বৈঠককে কার্যত ‘প্রহসন’ বলে কটাক্ষ করেন ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্যরা। এ ব্যাপারে সরাসরি কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়রা প্রশ্ন তোলেন, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দপ্তরের সামনে ভূমি রক্ষা কমিটির পরিবেশের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে চরম পুলিশি ও আইনি হেনস্থা দেখেও কেন সাংসদ সহ জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন? সেদিনের সেই অমানবিক অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে কী ভূমিকা পালন করেছিলেন জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা? ধ্রুবজ্যোতিবাবু জানান, পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও শাসক নেতৃত্বের একাংশে নিত্যদিন জেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে বালি লুঠ হয়ে যাচ্ছে। বালি মাফিয়ারা নির্বিচারে বিভিন্ন নদ নদীর চরিত্র বদল সহ বেপরোয়াভাবে বালি উত্তোলন করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংসের এ ধরনের বেআইনি কাজকারবার প্রশাসনের নাকের ডগায় মাফিয়ারা তাদের স্বেচ্ছাচারী সাম্রাজ্য কায়েম করেছেন। এ ব্যাপারে ছবি সহ বিস্তারিত তথ্য- প্রমাণাদি দফায় দফায় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন সাংসদ সহ জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা? প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্যরা। প্রসঙ্গক্রমে দুর্গাপুর নগর নিগমের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালমাঠ এলাকা লাগোয়া বেসরকারি সিমেন্ট কারখানা সহ কেন্দ্রীয় তাপবিদ্যুৎ সংস্থার তরফে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ তোলেন ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়। এরই পাশাপাশি গোপালমাঠ লাগোয়া এলাকায় বেআইনিভাবে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের অভিযোগের প্রসঙ্গ উঠে আসে তার কথায়। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ কীর্তি আজাদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পরিবেশ সংক্রান্ত বৈঠককে কার্যত ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেন তিনি। একইসঙ্গে দুর্গাপুর সহ খনি-শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষায় তারা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্যরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button