বেআইনিভাবে আদায়ীকৃত পার্কিংয়ের টাকা কার পকেটে? প্রশ্ন শিল্পাঞ্চলে

সংবাদ সফর, দুর্গাপুর: টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা মিলছে না। কিন্তু বসে নেই মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বিভিন্ন জনকল্যানমূলক রূপায়নে কোনও খামতি রাখছেন না তিনি। ফলে রাজ্যের অর্থ ভান্ডারে চাপ তো পড়বেই। এসব প্রকল্পের টাকা জোগানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এমনই অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি তো সে কথা বলছে না। সংকট,সমস্যা সত্ত্বেও সরকারি রাজস্ব লুঠের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে দুর্গাপুরে। লক্ষ লক্ষ টাকা রাজ্যের কোষাগারে ঢোকার বদলে তা বেমালুমভাবে শাসকনেতা বা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের পকেটে চালান হয়ে যাচ্ছে। এমনই অভিযোগে সরগরম শিল্পাঞ্চল।
শুধু বিরোধীরা নয়, এসব নিয়ে শাসকদলের অন্দরেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দুর্গাপুরের সিটিসেন্টারের পাকিং নিয়ে জলঘোলা চরমে উঠেছে। অভিযোগ, এই এলাকায় বেআইনিভাবে পার্কিংয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়েছে। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রশাসন সহ শাসক নেতৃত্বের চোখের সামনে রীতিমতো লুঠতরাজ চলেছে মাসের পর মাস! সবাই সব জানে। কিন্তু তা নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। অন্যদিকে, পার্কিংয়ের নামে মেয়াদ উত্তীর্ণ একটি সংস্থা বীরবিক্রমে তার বেআইনি কাজ কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল। পার্কিংয়ের নামে বাড়তি টাকা আদায়ও করা হচ্ছিল। এসব নিয়ে প্রতিবাদ বা খোঁজতল্লাশ করতে গেলেই ওই সংস্থার ‘বাহুবলী’ বা বাউন্সারদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে। হামলা থেকে বাদ যাননি সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীরাও।
বলতে আপত্তি নেই, সিটি সেন্টার এলাকায় বেআইনি পার্কিংয়ের অভিযোগ সংক্রান্ত ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকায়। কিন্তু বার বার চেষ্টা সত্ত্বেও প্রতিবারেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অর্থাৎ এডিডিএ-র চেয়ারম্যান কবি দত্ত, সিইও রাজু মিশ্রের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এ ব্যাপারে জেলা তৃণমূল সভাপতির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তবে অবশ্য খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি ভাবনাচিন্তার আশ্বাস মেলে সভাপতির তরফে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। যদিও অভিযুক্ত ওই পার্কিংয়ের সংস্থার মালিক সুজয় পাল ওরফে কেবু সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তোলেন। তার কথায়, বেআইনি তিনি কিছু করেননি। তিন বছরের লিজে পার্কিংয়ের বরাত পেয়েছেন তিনি। এসবের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে চরম অব্যবস্থা ও অসহযোগিতার অভিযোগে সুর চড়ান সুজয় পাল। যদিও এডিডিএ কর্তৃপক্ষের তরফে সম্প্রতি ফ্রি পার্কিংয়ের ঘোষণায় ওই সংস্থার কর্ণধারের বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলাই চলে।
যাইহোক, সিটি সেন্টারে পার্কিং নিয়ে হইচইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, মাসের পর মাস বেআইনিভাবে পার্কিংয়ের নামে আদায়ীকৃত টাকা কোথায় গেল? ওই টাকা রাজ্যের কোষাগারে ঢোকেনি নিশ্চয়! তবে লক্ষ লক্ষ টাকা কার পকেটে ঢুকেছে? লাভের কড়ি শুধু ওই অভিযুক্ত পার্কিং সংস্থার পকেটে ঢুকেছে- এমন কথা মেনে নেওয়া বেশ কঠিন। সেক্ষেত্রে এ ধরনের বেআইনি কাজ কারবারের ‘ননী-ছানা’-র কমবেশি কি সকলের পেটেই ঢুকেছে? প্রশ্ন তো উঠবেই।
বলাই বাহুল্য, শুরুতেই সিটি সেন্টার এলাকার পার্কিংয়ের দায়িত্ব ওই সংস্থার হাতে যাওয়া নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। এই টেন্ডারপ্রাপ্তিতে তৎকালীন এডিডিএ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শাসকদল ও প্রশাসনের একাংশের স্নেহ-সান্নিধ্যে একদা বেআইনি বালি কারবারে অভিযুক্ত ওই পার্কিং সংস্থার ফেঁপেফুলে ওঠার অভিযোগও কম নেই। হাজতবাসও হয় সুজয় পাল ওরফে কেবুর। কিন্তু তার হাতেই সিটি সেন্টারে পার্কিং পরিচালনার দায়িত্ব যাওয়ায় সমালোচনাও হয় বিস্তর। পরবর্তীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও পার্কিংয়ের নামে তোলাবাজি সহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাবশালীদের মদত ছাড়া এ ধরনের বেপরোয়া কাজ কারবার কি সম্ভব? এ প্রশ্নও মাথা চাড়া দেয় শিল্পাঞ্চলে।
কিন্তু সব জেনেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহ শাসক নেতৃত্বের তরফে কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। বলতে আপত্তি নেই, বাংলায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে রাজস্ব আয় বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক তখনই রাজস্ব লুঠের অবাধ সাম্রাজ্য কায়েম হয়েছে শিল্পাঞ্চলে! সেক্ষেত্রে এ ধরনের লুঠতরাজের নেপথ্যে কারা? পার্কিংয়ের নামে সরকারি রাজস্ব লুঠের লক্ষ লক্ষ টাকা কাদের ভাঁড়ারে ঢুকেছে? এ রকম হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমানসে। কী উত্তর দেবেন নগর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা?