শিল্পাঞ্চলে সংবর্ধনা পেল না দেশে পঞ্চম স্থানাধিকারী সম্পৃক্তা!

সংবাদ সফর, দুর্গাপুর, ২০, জুন: একটি গোলাপও হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। সংবর্ধনা জোটেনি। চন্দনের ফোটায় কেউই বরণ করে নেয়নি কৃতী পড়ুয়া সম্পৃক্তাকে। এ বছর দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় সিবিএসই-তে দেশে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে দুর্গাপুরের মেয়ে সম্পৃক্তা দত্ত। কোন্নগরের আদি বাসিন্দা হলেও আশৈশব কেটেছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। জন্মও এখানে। শিক্ষার শুরু থেকেই দুর্গাপুরের সিএমইআরআই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের পড়ুয়া সম্পৃক্তা। বাবা সিআইএসএফে কর্মরত। বর্তমানে সিএমইআরআই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সামনে সেইল কো-অপারেটিভ এলাকার গোষ্ঠগোপাল বীথির বাসিন্দা দত্ত পরিবার। স্কুল জীবনের বুনিয়াদি পর্ব থেকেই মেধাবী ছাত্রী হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নজরে পড়ে যায় সে। প্রতিটি পরীক্ষাতেই সফল হয় সম্পৃক্তা। অবশেষে দুর্গাপুর তো বটেই, সিবিএসসির সর্বভারতীয় দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৯৬ অর্থাৎ ৯৯.২ শতাংশ পেয়ে পঞ্চম স্থান লাভ করে তাক লাগিয়ে দেয় সে। উল্লেখ্য, এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের সিবিএসই দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৮ মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত চলে। মোট ৮৪টি বিষয়ে ২৪.১২ লক্ষ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। গত ১৩ মে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর দেখা যায় দুর্গাপুরের মেয়ে সম্পৃক্তা দত্ত দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ফল প্রকাশের পর তো বটেই, গত একমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সংবর্ধনা বা ন্যূনতম সম্মানটুকুও পায়নি শিল্পাঞ্চলের কৃতী ওই পড়ুয়া। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কাগজে স্বীকৃতি মিলেছে ঠিকই, কিন্তু শিক্ষানুরাগী শিল্পাঞ্চলের মানুষজনের কাছ থেকে সামান্য সংবর্ধনা বা সম্মানটুকু তো পাওনা ছিল সম্পৃতার। কিন্তু তা জোটেনি। কোন্নগরের কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। কিন্তু শিল্পাঞ্চলের সংবর্ধনা মিলল কই? প্রশ্ন তো থেকেই যায়। বলাই বাহুল্য, কোনরকম প্রাইভেট টিউশন ছাড়া স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, বাবা-মায়ের স্নেহ, সান্নিধ্য সহ নিজের অদম্য সাধনায় এই সাফল্য অর্জন করেছে সে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা জীবনে এ ধরনের অসাধারণ কৃতিত্ব লাভ মোটেই কম কথা নয়। তার এই অনুশীলন, অধ্যায়ন আগামী প্রজন্মকে দিশা দেখাবে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু একপ্রকার অসাধ্য সাধন করেও সমাজ সংসারের সংবর্ধনা বা সম্মান না পাওয়ায় কিছুটা অভিমানী শিল্পাঞ্চলের মেয়ে সম্পৃক্তা। তবে মা-বাবা, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ শিল্পাঞ্চলের মানুষজনের আশীর্বাদ পাথেয় করে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েছে সে। বর্তমানে বিজ্ঞান নিয়ে ওই স্কুলেই একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে সম্পৃক্তা। আগামীদিনে ডাক্তার হয়ে মানুষজনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার ভাবনা রয়েছে বলে জানায় সম্পৃক্তা। কিছুটা অভিমানের সুর ধরা পড়লেও সম্পৃতার মা পুতুল দত্তের বক্তব্য, দুর্গাপুরের শিল্পাঞ্চলের মাটিতে লালিত পালিত হয়েছে তার মেয়ে। তাই এই সাফল্য শুধু সম্পৃতার নয়, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেরও। সেক্ষেত্রে এই শিল্পাঞ্চলের মানুষজনের আশীর্বাদেই তার মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবন সফল হয়ে উঠুক এই কামনা করেন তিনি। এ ব্যাপারে সরাসরি দুর্গাপুরের সিএমপিআরআই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব না হলেও স্কুলের জনৈক শিক্ষক বলেন, সম্পৃক্তা দত্তের এই সাফল্যের কথা ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাকে সংবর্ধনা বা সম্মান প্রদর্শনেরও তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, জাতীয় শিক্ষক তথা দুর্গাপুর নেপালি পাড়া হিন্দি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ডঃ কলিমুল হক বলেন, সর্বভারতীয় স্তরে এ ধরনের সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয়। সম্পৃক্তা শুধু সিএমইআরআই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সম্পদ নয়, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সম্পদ ও গর্ব সম্পৃক্তা। আগামী প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে সম্পৃক্তাদের মতো সফল পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা বিভাগ বা সরকারিভাবে তাকে সংবর্ধনা বা যথাযথ সম্মান প্রদর্শন সহ সহযোগিতার বিষয়েও ভাবনা-চিন্তা করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।