তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পদে পঙ্কজ ! বিভ্রান্তি কাটাতে আসরে নেতৃত্ব
সংবাদ সফর, দুর্গাপুর: দলে পা রাখতেই প্রাপ্তিযোগ! সদ্য সিপিএম ত্যাগী পঙ্কজ রায় সরকারকে ঘিরে এমন আলোচনা সমালোচনা চলছেই। সম্প্রতি তাকে সাংগঠনিক পদে আনার প্রসঙ্গেও তৃণমূলের অন্দরেই নানা কথা শোনা যাচ্ছে। এসবের মধ্যেই জেলা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে ওই নেতাকে পশ্চিম বর্ধমান বিধানসভা কেন্দ্রের দলের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে, এমনই একটি খবর চাউর হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আগামীদিনে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ বা জেলায় লাভজনক কোন পদে দেখা যেতে পারে কি না – সেসব নিয়ে দলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যদিও পর্যবেক্ষক সংক্রান্ত খবরের বিভ্রান্তি কাটাতে আসলে নেমে পড়ে দলীয় নেতৃত্ব।
বলাই বাহুল্য, সম্প্রতি জেলা সভাপতির তরফে বিভিন্ন এলাকায় ভোটার লিস্ট সংশোধনের কাজে দলের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই তালিকায় পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে পঙ্কজ রায় সরকারের নাম রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংগঠনের পর্যবেক্ষক হিসেবে এ ধরনের তালিকা প্রকাশের খবর সম্প্রচারে সরাসরি উষ্মা প্রকাশ করেন দলের বর্ষীয়ান নেতা ভি শিবদাসন দাশু। পর্যবেক্ষক নিয়োগে জেলা সভাপতি এক্তিয়ার বা ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। সরাসরি ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেন, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া এ ধরনের সাংগঠনিক নিয়োগ বিধিসম্মত নয়। সেক্ষেত্রে এসব নিয়ে দলের অন্দরে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূলের ওই বর্ষীয়ান নেতা। যদিও পরবর্তীতে তিনি জানান, পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক হিসেবে পঙ্কজ রায় সরকারের নাম নিয়ে ভুলবার্তা সম্প্রচার করা হয়েছে। স্রেফ ভোটার লিস্ট সংশোধনের কাজের তদারকি বা ইনচার্জ-এর দায়িত্বে তাকে আনা হয়েছে মাত্র। আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ভোটার লিস্ট সংশোধনের কাজ চলবে বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে এ ব্যাপারে জেলা নেতৃত্বের তরফে ভুলভ্রান্তি শুধরে নেওয়াও হয়েছে বলে দাবি করেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা ভি শিবদাসন দাশু। এ ব্যাপারে অবশ্য জেলা সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয়, গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে প্রবল মমতা হাওয়াতেও পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে সাফল্য পায়নি তৃণমূল। গত লোকসভাতেও ভোটের হারে স্বস্তিতে নেই ঘাসফুল শিবির। বলাই বাহুল্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের জয়ে পরোক্ষ অবদান ছিল সিপিএমের বলে অভিযোগ। বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে হারানোর পাশাপাশি পূর্ব কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীকে হারিয়ে আভাস রায়চৌধুরীকে জেতানোর ‘ রাম-বাম’ কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে মনে করেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে অবশ্য লক্ষণ উতরে গেলেও আভাসকে জেতানো যায়নি। আগামী বিধানসভায় এই পশ্চিম আসনের দখল নিতে মরিয়া তৃণমূল। সেক্ষেত্রে কি ‘ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’-র দায়িত্বে আনা হয়েছে একদা সিপিএমের এই সংগঠক পঙ্কজ রায় সরকারকে ? এমন ভাবনা পোষণ করছেন তৃণমূলের কেউ কেউ। তবে দলের পর্যবেক্ষক নয়, ভোটার লিস্টের কাজের দায়িত্বে তাকে আনা হয়েছে বলে মত দলীয় নেতৃত্বের।
উল্লেখ্য, দলভুক্তির দিন থেকে সিপিএমত্যাগী পঙ্কজ রায় সরকারকে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। জেলার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা নিয়েও দলীয় নেতৃত্বের চাপা গুঞ্জন কান পাতলেই শোনা যায়। আগামীদিনে সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী ওই নেতাকে জেলা সংগঠন বা লাভজনক কোন পদে দেখা যাবে না তো! আড়ালে আবডালে এমন সম্ভাবনার কথাও উসকে দিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্বের কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়- তা সময়ই বলে দেবে।