সম্পাদকীয়

তদন্ত কোন পথে ?

সারদা, নারদা প্রায় অস্তাচলে। সাম্প্রতিক শিক্ষা দুর্নীতির তদন্তেরও ‘তথৈবচ’ অবস্থা। আর এসবের মধ্যে সিবিআইয়ের নয়া সংস্করণ ‘ আরজি কর কান্ড’। ঘটনার এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টে এ বিষয়ে দুটি শুনানিও সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে সাধারণ মানুষজনের আস্থা অর্জন কি সম্ভব হয়েছে? প্রশ্ন তো থেকেই যায়। তবে তদন্ত নিয়ে যাই হোক না কেন- পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে কোমর কষে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। শাসকবিরোধী আন্দোলনে ভাগ বসাতে মরিয়া বাম-বিজেপি। সেই তালিকাতে কংগ্রেসের নাম বাদ দিই কী করে? বলাই বাহুল্য, বিভিন্ন ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য জুড়ে ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই প্রায় আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার সহ প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক সমাজের তরফে প্রতিবাদ আন্দোলন সংঘটিত করা হচ্ছে। বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সহ কমক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তার দাবিতে তারা সরব। একইসঙ্গে মাঠে ময়দানে নেমে পড়েছে নাগরিক সমাজও। ফলে সব মিলিয়ে একটা ছন্নছাড়া অবস্থা তৈরি হয়েছে গোটা বাংলায়। গত ৯ আগস্ট কর্মরত মহিলা চিকিৎসকের মর্মান্তিক মৃত্যু কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যকে। ঘটনা পরবর্তীতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকায় রীতিমতো সমালোচনা ঝড় উঠেছে। তবে সমালোচনার জবাবে শাসক নেতানেত্রীদের তরফে কিছু মন্তব্য পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে দিয়েছে বলাই চলে। আর এসবেরই ফায়দা তুলতে মরিয়া বিরোধীরা। সংসদীয় রাজনীতিতে এ কোনও নতুন ঘটনা নয়। শাসক দলের প্রশংসা না করলেও সমালোচনায় কোন কসুর রাখবেন না বিরোধীরা-এটাই দস্তুর। কিন্তু আরজি করের ঘটনা পরবর্তীতে শাসকবিরোধী আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে নিতে মরিয়া বাম-বিজেপি। একপ্রকার অলিখিত প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছেন তারা। ‘ উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ কিংবা ‘ উই ডিমান্ড জাস্টিস’- স্লোগানে সীমাবদ্ধ নেই আন্দোলন। তাতে আবার ‘ আজাদী’-র স্লোগানও সংযোজিত হয়েছে। এই স্লোগানের পেটেন্টধারী বামেরাই- এমনটাই মনে করা হয়। আর আরজি করের বিচারে দাবিতে এ ধরনের স্লোগানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপি নেতৃত্ব। এমনকি তদন্ত নিয়ে কেন্দ্র,রাজ্য সেটিংয়ের তত্ত্ব খাড়া করে বাম মনোভাবাপন্ন প্রতিবাদকারীরা সরব হয়েছেন। একইসঙ্গে যাদবপুরের ‘ হোক কলরব’ পন্থী পড়য়া বা প্রাক্তনীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে ময়দান গরম করছেন। আর তাতেই চরম আপত্তি জানিয়েছেন রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব। অন্যদিকে, এসবে খুশি বামেরা। ফলে সব মিলিয়ে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে নিতে কোন কসুরই বাদ দিচ্ছেন না বিরোধীরা বলাই চলে। তবে এ প্রসঙ্গে ঘটনার তদন্তের কথা না বললেই যে নয়। বলতে আপত্তি নেই, সুপ্রীম কোর্ট সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে আস্থাপ্রকাশ করলেওবাংলার মানুষজনের ভরসা অর্জন এখনও অধরা। রাজ্য পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে গ্রেফতার করে। তারপরে আর কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ দু-একজনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ঠিকই, তাও কিন্তু ওই চিকিৎসকের ধর্ষণ,খুনে ঘটনায় নয়। তবে তদন্তে প্রাথমিক পর্বে ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় ও সন্দীপ ঘোষের পলিগ্রাফ পরীক্ষাও করা হয়েছে। তাতে কি কোনও সুরাহা মিলেছে? প্রশ্ন তো থেকেই যায়। একইসঙ্গে তদন্তে গতিপ্রকৃতি নিযেও রীতিমতো সংশয়ের মেঘ জমেছে জনমানসে। ফলে সব মিলিয়ে বলাই যায়, আপাতত একটা ডামাডোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোটা রাজ্যে। প্রশ্ন তো সেখানেই, এই পরিস্থিতিতে তিলোত্তমা সুবিচার পাবেন কি? বিচার চাইছেন সাধারণ মানুষজন। আগামীদিনে তা মিলবে কি? না কি-সারদা,নারদার মতো আরজি করে এই ঘটনাও হিমঘরে চলে যাবে? শাসক বিরোধী হারজিতের লড়াইয়ে হারিয়ে যাবে না তো তিলোত্তমার তদন্ত? প্রশ্ন তো উঠবেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button