ভুল ইনজেকশনই মৃত্যু প্রসূতির! শাসক নেতৃত্বের আশঙ্কায় প্রশ্ন

সংবাদ সফর, দুর্গাপুর, ২৪ এপ্রিল: ভুল ইনজেকশনেই মৃত্যু হয়েছে প্রসূতির? চিকিৎসার গাফিলতি বা ভুলে প্রাণ গেল তাঁর? শাসক নেতৃত্বের বক্তব্যে এমনই আশঙ্কার কথা শোনা গেল। তবে এসবের পাশাপাশি ওই সদ্যপ্রসবার মৃত্যুর নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনার কথাও শোনা গিয়েছে শাসক নেতৃত্বের গলায়। সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করতে কে বা কারা এ ধরনের চক্রান্তে জড়িত- তা নিয়েও তদন্ত দাবি করেছেন তৃণমূল নেতা পঙ্কজ রায় সরকার। বলাই বাহুল্য, বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে চরম উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন বছর বাইশের লক্ষ্মী মুর্মু। বুধবার পুত্র সন্তান প্রসব করেন তিনি। কিন্তু ওইদিনই রাতের দিকে পেটে যন্ত্রণা অনুভব করেন লক্ষী। তখনই একটি ইনজেকশন তাকে দেওয়া হয়। আর এই ভুল ইনজেকশনের কারণে তার মেয়ে লক্ষীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাবা রূপচাঁদ মুর্মু। পরিবারের অভিযোগ, এ ব্যাপারে হাসপাতালের তরফে তাদের কোন খবর দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে এসেই এই মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা জানতে পারেন বলে দাবি করেন তারা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মৃতার পরিবার সহ আত্মীয় পরিজনেরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি কমব্যাট ফোর্স সহ নিউ টাউনশিপ থানার তরফে বিশাল পুলিশ বাহিনী হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানেই তৃণমূল নেতা পঙ্কজ রায় সরকার ভুল ইনজেকশনের কারণেই ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে কার্যত আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তার বক্তব্যের সমর্থনে ওইদিনই ইনজেকশনের কারণে আরও দুজন প্রসূতির শারীরিক সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। মৃতার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ওই প্রসুতির মৃত্যুকে স্বাভাবিক ঘটনা বলতে নারাজ, সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রকারান্তরে তা বুঝিয়ে দেন তিনি। তবে এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলেও অনুমান ওই তৃণমূল নেতার। পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সহ সরকারের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করতে কে বা কারা এই ষড়যন্ত্র করেছে- তা নিয়েও তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। তার কথায়, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের তরফেও তদন্ত চালানো হবে বলেও জানান পঙ্কজ রায় সরকার। তবে এসবের যথাযথ তদন্তের স্বার্থে আদালতে যাওয়ারও কথাও বলেন তিনি। এ ব্যাপারে হাসপাতাল সুপার ধীমান মন্ডল জানান, নিশ্চিতভাবে এখনও মৃত্যুর কারন জানা যায়নি । তবে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এদিকে, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে সদ্যপ্রসবার মৃত্যু ঘিরে শাসক নেতৃত্বের আশঙ্কার কথায় কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কথায়, ওই তৃণমূল নেতার আশঙ্কাতেই সরকারি ব্যবস্থার ব্যর্থতার ছবিটাই কার্যত প্রকট হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে মনগড়া ষড়যন্ত্রের কথা বলে মুখরক্ষার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি ওই বিজেপি নেতার। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ সর্বত্রই সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতির বাংলার মানুষজন বুঝতে পেরেছেন। স্বাভাবিক জনরোষ থেকে গা বাঁচাতে শাসক নেতৃত্বের অনেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সেক্ষেত্রে বিরোধীদের অভিযোগ তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের মুখে শোনা যাচ্ছে বলে কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন জেলা বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়।