উৎসবের নেপথ্যে রাজনীতি! জিতেন্দ্রর ঘোষণায় জল্পনা

সংবাদ সফর, আসানসোল: শাসক-বিরোধীর রাজনৈতিক লড়াই নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার কি লড়াইয়ের আঙ্গিকটা বদলাচ্ছে? শাসকের বিরুদ্ধে সংস্কৃতির মঞ্চটাকেই ব্যবহার করতে চাইছেন বিরোধীরা? শনিবার বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির তরফে আসানসোল সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের ঘোষণায় এমনই জল্পনা শুরু হয়েছে জনমানসে। তবে এ ধরনের উৎসবে কোন রাজনীতি নেই। খনি শিল্পাঞ্চলের সার্বিক সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ বলে দাবি বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির। তবে এসব নিয়ে বাকবিতর্ক এড়িয়ে গিয়েছেন শাসক নেতৃত্ব।
শনিবার আসানসোল জিটি রোডের গোধূলি সংলগ্ন বাসভবনে জিতেন্দ্র তিওয়ারি সাংবাদিকদের জানান, কালচারাল এন্ড লিটারারি ফোরাম অফ বেঙ্গলের আসানসোল শাখার তরফে নতুন বছরে আসানসোল সংস্কৃতি উৎসব, ২০২৫ আয়োজনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই উৎসব চলবে। তার কথায়, রবীন্দ্র ভবনে এই উৎসবের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। তবে রবীন্দ্র ভবন না হলে শহরের অন্যত্র এই উৎসবের আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
একইসঙ্গে এ ব্যাপারে শাসক দলসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন ওই বিজেপি নেতা। অঞ্চল-আঞ্চলিকতাকে গুরুত্ব দিতে সংগীত ও নৃত্যশিল্পী, চিত্রশিল্পী সহ আসানসোলের সাহিত্যিক, কবি, বুদ্ধিজীবীদের প্রতিভা ও সৃজনশীলতা তুলে ধরার লক্ষ্যে এই উৎসব বলে জানান জিতেন্দ্র তিওয়ারি। একইসঙ্গে চলচ্চিত্র উৎসবের আদলে উৎসব প্রাঙ্গনে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি, তথ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থাও রাখা হবে। সেক্ষেত্রে আসানসোল ফিল্ম ফেস্টিভেল ফের চালু করার ভাবনাও প্রতিফলিত হয়েছে ওই বিজেপি নেতার বক্তব্যে। একইসঙ্গে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষজনকে আসানসোল সংস্কৃতি উৎসব সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে শেষ মুহূর্তে কলকাতা সঙ্গীত মেলার বন্ধের প্রসঙ্গ উঠলেও শাসক দল তৃণমূল বা প্রশাসনের তরফে আসানসোলের সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে এই উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা মিলবে বলে আশাবাদী জিতেন্দ্র তিওয়ারি। কিন্তু তা সত্বেও কোনরকম রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক বাধায় এই উদ্যোগ ব্যাহত হলে তার জবাব দেবেন খনি শিল্পাঞ্চলের মানুষজন বলে জানান তিনি।
বলাই বাহুল্য, সম্প্রতি দুর্গাপুর উৎসব নিয়ে বিতর্ক বিবাদ কম হয়নি। উৎসব আয়োজনের প্রথম দিন থেকেই বিতর্ক- মতান্তরের ছবিটাই প্রকট হয়েছে শিল্পাঞ্চলে। একইসঙ্গে বহিরাগত নামজাদা শিল্পীদের ভিড়ে স্থানীয় শিল্পী কলাকুশলীরা বঞ্চিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ কম ওঠেনি। সেক্ষেত্রে স্থানীয় শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকদের গুরুত্ব দিতেই আসানসোল সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজনের নেপথ্যে রাজনৈতিক সুত্র সন্ধানে নেমে পড়তে পারেন কেউ কেউ। অঞ্চল-আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি চলচ্চিত্র উৎসবের ভাবনাকে উসকে দিয়ে নতুন খেলা শুরু করলেন দুঁদে রাজনীতিবিদ জিতেন্দ্র তিওয়ারি- এমনটা মনে করছেন অনেকেই। কিন্তু এসবের পেছনে কোন রাজনীতি নেই বলে দাবি করেছেন ওই বিজেপি নেতা। খনি শিল্পাঞ্চলের সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের প্রসার ও প্রচারে এই উৎসবের উদ্যোগ বলেও দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এসব নিয়ে অযথা রাজনৈতিক বিতর্কে যেতে নারাজ তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশু। গণতান্ত্রিক দেশে নিয়মবিধি মেনে উৎসব অনুষ্ঠান করার অধিকার সকলের রয়েছে। সেক্ষেত্রে এসব নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে রাজি হননি তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক।